ঢাকা : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খান।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর ধারাবাহিকতায় গাজায় চলমান যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই আবেদন করেছেন তিনি। খবর
তবে হামাসের শীর্ষ তিন নেতার সঙ্গে নিজের এবং দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনের খবরে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের তুলনা করা হচ্ছে। এটা বাস্তবতার বিকৃতি।
এদিকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেলে কি গ্রেপ্তার হবেন হামাস নেতারা এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু?
মূলত গণহত্যা জেনোসাইড, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আগ্রাসনের সাথে যারা জড়িত এমন ব্যক্তির বিচার করার এখতিয়ার আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের। যেসব দেশ এই আদালতের সদস্য নয়, সেসব দেশের নাগরিকদের বিচার করতে পারবে না আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তবে তবে আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না, কিন্তু এই আদালতের সদস্যভুক্ত কোন দেশে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, আগ্রাসনের সঙ্গে ওই দেশের কেউ জড়িত থাকলে এমন কোন ব্যক্তির বিচার বা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার এখতিয়ার আছে এই আদালতের।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের যে ১২৪টি রাষ্ট্র আইসিসি নামের স্থায়ী বৈশ্বিক আদালতকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় ইসরায়েলের নাম নেই। তেমনি নাম নেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ারও। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সদস্য এবং দেশটি আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিয়েছে।
তাই ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয়নি এমন সব দেশে নেতানিয়াহু, হানিয়া এবং বাকি তিন জনের কোনো ঝুঁকি নেই। তাছাড়া আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তা বাস্তবায়নের জন্য শক্তিপ্রয়োগের ক্ষমতা আদালতটির নেই।
তবে মূল সমস্যা হলো, একবার যদি আইসিসি পরোয়ানা জারি করে— তাহলে তা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত এই আদালতকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোতে সফর করা ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ হবে নেতানিয়াহু, হানিয়া এবং তালিকার অপর তিন জনের জন্য।
কারণ সেক্ষেত্রে সেসব দেশের সরকার চাইলেই আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে আমলে নিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশ আইসিসিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন অর্থ এই নয় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অপরাধের অভিযুক্ত হয়ে গেছেন, আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি গ্রেপ্তার হবেন বিষয়টি এমনও না। তার থাকবে আত্মসমর্থনের সুযোগ।
এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এই আবেদনের বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসির বিচারকদের একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত দেবে।
এদিকে, করিম খানের এই আবেদনের পর ফ্রান্স জানিয়েছে যে দেশটি সিনওয়ার ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে আবেদনের পক্ষে আছে। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অবস্থান ব্যক্ত করে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফ্রান্স আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও এর স্বাধীনতা এবং সব পরিস্থিতিতে দায়মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইকে সমর্থন করে।’
নেতানিয়াহু ও হামাস প্রধান ছাড়াও এ তালিকায় আরও নাম আছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাসের আরও দুই নেতা—সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি; যিনি মোহাম্মদ দেইফ নামেই বেশি পরিচিত এবং হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া। তবে নেতানিয়াহু ও সিনওয়ারের দায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেন আইসিসির কৌঁসুলি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামাস নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
অতর্কিত সেই হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। চলমান সেই অভিযানে গত ৭ মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন সাড়ে ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৯ হাজার। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :