ঢাকা : কথিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজের’ প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের আশপাশে দুই দিনের ‘শাস্তিমূলক’ সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন।
তাইওয়ান প্রণালী ও চীনের উপকূলের পাশে তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি দ্বীপ ঘিরে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ মহড়া শুরু করেছে চীন।
তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী সেনাদের তৈরি অবস্থায় রেখে জানিয়েছে, তাদের দ্বীপকে তারা রক্ষা করতে পারবে এমন আত্মবিশ্বাস তাদের আছে।
তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লাই চিং থে দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মাথায় এ মহড়া শুরু করল চীন। গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ মনে করা বেইজিং লাইকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে বিবেচনা করে।
সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর লাই যে বক্তব্য দিয়েছেন তার নিন্দা করেছে চীন। বক্তব্যে লাই চীনকে হুমকি দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ বক্তব্যকে ‘মর্যাদাহানিকর’ বলে অভিহিত করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ই।
রয়টার্স জানিয়েছে, লাই চীনের সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার প্রস্তাব দিলেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তিনি তাইওয়ানের ওপর চীনের সার্বভৌমত্বে দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণই তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
চীনের গণমুক্তি ফৌজের (পিএলএ) ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তাইওয়ানের আশপাশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও রকেট বাহিনীর সমন্বয়ে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট থেকে (স্থানীয় সময়) যৌথ অভিযান শুরু করেছে।
অভিযানটি তাইওয়ান প্রণালীর পাশাপাশি তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বে এবং তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ কিনমেন, মাতসু, ওয়াচ্ছু ও দংইং ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে।
এই মহড়ায় নৌ-বিমান যৌথ যুদ্ধ-প্রস্তুতি টহল, প্রধান লক্ষ্যগুলোতে নির্ভুল আঘাত এবং দ্বীপমালাটির ভেতরে ও বাইরে বাহিনীগুলোর সমন্বিত অভিযানের ‘যৌথ বাস্তব যুদ্ধ ক্ষমতা’ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে চীনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলেছে, তাইওয়ানের স্বাধীনতা বাহিনীর বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজের জন্য এটি একটি কঠিন শাস্তিও বটে আর বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ ও উস্কানির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম মহড়া এলাকার একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, পাঁচটি এলাকায় মহড়াটি হচ্ছে। এলাকাগুলোর সবই তাইওয়ান ও চীনের উপকূলে তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রিত দ্বীপগুলোকে ঘিরে আছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মহড়ার নিন্দা করে বলেছে, তারা ওই দ্বীপগুলোর চারদিকে তাদের বাহিনী মোতায়েন করেছে আর তারা নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করতে পারবে বলে বিশ্বাস করে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, এই পরিস্থিতিতে সামরিক মহড়া শুরু করা তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতায় কোনো অবদান তো রাখবেই না, শুধু চীনের সামরিক মানসিকতাকে তুলে ধরবে।
তাইওয়ানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে রয়টার্সকে বলেছেন, মহড়াগুলো তাইওয়ানের প্রত্যাশিত দৃশ্যেরই অংশ।
প্রেসিডেন্ট লাইয়ের অভিষেকের প্রস্তুতির সময়ই তাইওয়ানের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তারা চীনের সামরিক গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন।
এমটিআই