ঢাকা : ভারতে লোকসভার ভোটের আবহে হঠাৎ দুই ভিন্ন কারণে আলোচনায় চলে এসেছে বাংলাদেশ। কলকাতায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের হত্যাকাণ্ড কয়েক দিন ধরেই ভারতের সব রাজ্যের খবরের কাগজে জায়গা করে নিচ্ছে। রোমহর্ষ সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই দেশের পুলিশ ও গোয়েন্দারা যখন রহস্যের জট ছাড়াতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় রাজনৈতিক বিতর্কে বাংলাদেশকে টেনে আনলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি সরাসরি বলে দিলেন, নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতীয় গণতন্ত্রের হাল বাংলাদেশের মতো হয়ে যাবে।
লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় শনিবার (২৫ মে) ভোট গ্রহণ করা হবে দিল্লির সাতটি আসনে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্ত কেজরিওয়াল দিন–রাত এক করে ফেলেছেন সেই ভোটের প্রচারে। বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে এবারের ভোট–মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে তিনি সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, বিজেপি এবারেও যদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে, মোদী যদি আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে যেটুকু গণতন্ত্র অবশিষ্ট আছে, তা-ও থাকবে না। দেশটা কেমন হয়ে যাবে সেই বর্ণনা প্রসঙ্গেই তিনি টেনে এনেছেন বাংলাদেশের নাম।
শুধু জনসভা বা রোড শোয় অংশ নিয়ে ভাষণেই নয়, সর্বভারতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও কেজরিওয়াল এসব কথা বলেছেন। গতকাল শুক্রবার (২৪ মে) প্রকাশিত হয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। সেখানেও প্রতিবেশী বন্ধুদেশের গণতন্ত্রকে তিনি বসিয়েছেন রাশিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে এক আসনে।
কেজরিওয়ালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তৃতীয়বারের মতো মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের হাল কী হবে বলে তিনি মনে করেন? জবাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা সংবিধান বদলে দেবে এবং দেশটা স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে। হয় দেশে কোনো নির্বাচনই হবে না, নতুবা রাশিয়ার মতো ভোট হবে, যেখানে পুতিন হয় সব বিরোধীকে কারাগারে পুরে রাখেন, নয়তো মেরে ফেলেন। তারপর নির্বাচন হলে দেখা যায়, তিনি ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন!
এর পরই কেজরিওয়াল বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, বাংলাদেশে দেখা গেল, শেখ হাসিনা সবাইকে (বিরোধীরা) কারাগারে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর বিশাল ব্যবধানে জয়ী হলেন। পাকিস্তানে কী দেখা গেল? তারা ইমরান খানকে কারাগারে পুরল। দল ছারখার করে দিল। প্রতীক কেড়ে নিল; এবং জিতে গেল। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে ভারতেও এ ধরনের নির্বাচন হবে। গোটা বিরোধীকুলকে কারাগারে বন্দী করা হবে এবং তারা ভোটে জিতবে।
পাকিস্তান নিয়ে বলা হলেও রাশিয়া ও বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রহীনতা’ নিয়ে ভারতের কোনো শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী আজ পর্যন্ত এমন মন্তব্য করেননি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
কেজরিওয়াল বলেন, বিজেপি জানে, দিল্লিতে আমাকে হারাতে পারবে না। একবার আমরা ৬৭ (মোট আসন ৭০) আসন পাই। পরেরবার পাই ৬২ আসন। তাই তারা আমাকে ফাঁসিয়ে দেয় মিথ্যা মামলায়।
তিনি বলেন, আমি পদত্যাগ করলে ওরা সরকার ফেলে দেবে। গণতন্ত্রের পক্ষে তা মারাত্মক। আমি পদত্যাগ করলে ওরা কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেও ফেলে দেবে। পিনারাই বিজয়নের (কেরালা) সরকারকেও। এই লড়াইটাই আমরা লড়ছি। গণতন্ত্রকে ওরা জেলে পুরলে গণতন্ত্রকে জেল থেকেই চালাতে হবে।
এমটিআই