ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজ্যে অন্তত চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে কলকাতা শহরের নানা এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, বৃষ্টির কারণে সোমবার নগরীতে মেট্রোরেল চলাচলও বিঘ্নিত হয়েছে।
ঝড়ের সময় একটি বাড়ির কার্নিশ ভেঙে আরও একজন মারা গেছেন। ঝড়ের মধ্যে মৌসুনি দ্বীপে রেণুকা মণ্ডল নামে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মহেশতলার নুঙ্গিতে তাপসী দাস (৫৩) নামে এক নারী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। স্থানীয়রা জানান, সকালে রাস্তায় জমা পানিতে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তাপসী। লোকজন তাকে ওই অবস্থায় দেখে মহেশতলা থানায় খবর দেন। পরে ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্য দিকে, প্রবল দুর্যোগের মধ্যে ‘হুকিং’ করা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পানিহাটির বাসিন্দা গোপাল বর্মণ (৪৭)। পরে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির বাসিন্দা ফড়ে সিংহ ও তরুণ সিংহ নামে দুই বাবা-ছেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
ঝড়ে উপড়ে যাওয়া কলাগাছ কাটতে গিয়ে তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন বলে জানায় আনন্দবাজার।
তার আগে সোমবার সকালেই ঝড়ের মধ্যে কলকাতার এন্টালিতে একটি বাড়ির কার্নিস ভেঙে মোহাম্মদ সজিব নামে ৫১ বছরের এক ব্যক্তি মারা যান।
সোমবার (২৭ মে) আলিপুর আবহাওয়া অফিস থেকে পাওয়া শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, স্থলভাগে প্রবেশ করার পর ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল ধরে ক্রমে উত্তর দিকে এগিয়েছে। গত কয়েক ঘণ্টায় সেটির গতি ছিল ঘণ্টায় আট কিলোমিটার।
রেমালের প্রভাবে রবিবার থেকে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। রেমাল স্থলভাগে উঠে আসার পর এর তাণ্ডবে রাজ্যের অনেক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে, কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে।
রেমালের তাণ্ডবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে এক শিশু ও এক নারীসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বলেছে, সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের ছয় জেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এছাড়ও, ঘূর্ণিঝড়ে ইতোমধ্যে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
এমটিআই