ঢাকা : হিন্দু ভোটারদের তুষ্ট করে টানা তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যেখানে রাম মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সেই অযোধ্যা আসনেও হার মেনে নিতে হয়েছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপিকে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ঘোষিত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপির নির্বাচনি জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) ওপর ভর করে মোদীর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু বিরোধী জোটের বিস্ময়কর উত্থানে বিজেপি এক দশক পর পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২৪০ আসন। আর এনডিএ এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৩ আসন।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এককভাবে ৯৯ আসন পেলেও তাদের ইনডিয়া জোট ২৩২ আসন জিতে নিয়েছে।
ইনডিয়া জোটের শরিক দলগুলো সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের নির্বাচনের চেয়ে ১০৩টি আসন বেশি পেয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির জোট এনডিএ হারিয়েছে ৬০টি আসন।
বিজেপি বড় ধাক্কা খেয়েছে উত্তরপ্রদেশে, সেখানে ৮০টি আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছে ৩৬টি। অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের সাফল্যে ৪৩টি আসন জিতে নিয়েছে ইনডিয়া জোট।
এই উত্তর প্রদেশেরই অযোধ্যা শহরের ফৈজাবাদ নির্বাচনী আসনে গত ২২ জানুয়ারি হিন্দুদের জনপ্রিয় দেবতা রামের নামে তৈরি করা বিশাল মন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
৭০ একরের একটি কমপ্লেক্সের ৭ দশমিক ২ একর জায়গাজুড়ে তিন তলা মন্দিরটি বানানো হয়েছে। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে গোলাপি চুনাপাথর ও কালো গ্রানাইট পাথর। আর এতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৭০ লাখ রুপি।
গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
যে স্থানটিতে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে রামের জন্ম হয়েছিল বলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী লাখ লাখ মানুষ বিশ্বাস করে।
এক সময় এই স্থানটিতে একটি মসজিদ ছিল। ১৬ শতকে নির্মিত মসজিদটির নাম ছিল বাবরি মসজিদ।
১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ মানুষ নিহত হয়।
রাম যেখানে জন্মেছিলেন, ঠিক সেই জায়গায় এই হিন্দু দেবতার একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপরে মুসলিম ‘আক্রমণকারীরা’ মসজিদটি নির্মাণ করেছিল বলে ভারতের উগ্র হিন্দু দলগুলোর দাবি।
এই মন্দির নির্মাণ ছিল মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি। ৩৫ বছরের পুরনো এই বিতর্কিত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে ভর করেই বিজেপি ভারতের রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে এবং ক্ষমতায় এসেছে।
সেই অযোধ্যায় ভোটে হেরে ফৈজাবাদ আসনে বিজেপির বর্তমান এমপি লুলু সিং মঙ্গলবার (৪ জুন) দলের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের এবং অযোধ্যার মর্যাদা রক্ষা করতে পারিনি, কোনো সীমাবদ্ধতা নিশ্চয় আমার মধ্যে ছিল। অযোধ্যার এই আসনে আমাদের পরাজয়ের কোনো কারণ নিশ্চয় আছে।
রয়টার্স লিখেছে, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে পরপর দুইবার ফৈজাবাদ আসনের এমপি ছিলেন বিজেপির লুলু সিং। ওই দুই নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রজ্যে যথাক্রমে ৭১ ও ৬২ আসন পেয়েছিল মোদীর দল বিজেপি। এবার তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি আর বেকারত্বের যে দুশ্চিন্তা নিয়ে ভোটাররা এবার রায় দিয়েছেন, তার কাছে মোদীর ধর্মের ধুয়া পাত্তা পায়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন অযোধ্যা ব্যাপার মন্ডলের চেয়ারপার্সন রাকেশ যাদব রয়টার্সকে বলেন, মন্দির নিয়ে আমরা খুব খুশি, কিন্তু মানুষ বিজেপির ওপর বিরক্ত।
তিনি বলেন, মন্দির উদ্বোধনের আগে অযোধ্যার উন্নয়ন কাজের সময় পুরনো অনেক দোকান ভেঙে ফেলা হয়। তখন প্রত্যাশার চেয়ে কম ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
মানুষকে আপনি সবসময় জাতপাত আর মন্দির-মসজিদের রাজনীতিতে টানতে পারবেন না। তারা উন্নয়নও দেখতে চায়। আর সে কারণেই নির্বাচনে এরকম বিস্ময়কর ফলাফল।
এমটিআই