ঢাকা : ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দেশটিতে দুইবার ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা নরেন্দ্র মোদি।
আগামীকাল রোববার (৯ জুন) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। এর মাধ্যমে জওহেরলাল নেহেরুর পর তিনি একমাত্র নেতা হিসেবে তিনবার দেশটির সবোর্চ্চ ক্ষমতায় আসীন হতে যাচ্ছেন। খবর আলজাজিরার।
মোদির শপথকে ঘিরে এরই মধ্যে ভারতীয়দের চোখে আশা-আকাঙ্ক্ষার বীজ বোনা শুরু হয়ে গেছে। জনগণের আশা নতুন সরকার তাদের জীবনমানের উন্নতি করবে। সুষ্ঠু সরকার ব্যবস্থা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত হবে বলে নরেন্দ্র মোদি যে আশ্বাস দিয়েছেন তা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সবার মাঝে তৈরি হয়েছে কৌতুহল।
ভারতের নির্বাচন কমিশন যখন গত মঙ্গলবার ৬৪ কোটি জনগণের ভোট গগণায় ব্যস্ত, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ৫৭ বছর বয়সী কর্মী বিশাল পালিওয়াল বাড়িতে ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন নিজের সময়গুলো।
কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়ে মোদি সরকার লকডাউন ঘোষণা করার পর রাজস্থান প্রদেশের গ্রানাইট পাথর ব্যবসায়ী পালিওয়াল বেকার হয়ে যান। ফলাফল ঘোষণার পরের দিন পালিওয়াল ঘুম থেকে জেগে উঠে জানতে পারেন বিজেপি তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে সকল জরিপকে পিছনে ফেলে ৫৪৩ সদস্যের লোকসভায় ২৪০টি আসন পায় বিজেপি। কিন্তু এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তারা ৩০৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) অধীনে সরকার গঠন করতে প্রস্তুত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ প্রসঙ্গে পালিওয়াল বলেন, বিজেপির এভাবে আসন হারানো দেশে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
পালিওয়াল বলেন, ‘ফলাফল দেখে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। জনগণ এবার ভোট দিয়ে বিজেপিকে নয় বরং বিরোধী দলকে বেছে নিয়েছে, এসময়ে যা আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল।’
বিশ্লেষকরা বলেছেন, লোকসভায় মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং জনতা দল (ইউনাইটেড) সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে। কথা শোনা যাচ্ছে, তারা বিজেপির মিত্র হিসেবে থাকার জন্য তারা মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদসহ লোকসভার স্পিকারের পদ দাবি করছে।
তবে বিজেপি জোর দিয়ে বলেছে, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাটা আগের বারের মতোই সহজ। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র জাফর ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বের প্রতি এনডিএ-র প্রত্যেক সদস্যের আস্থা রয়েছে। গত ১০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সরকার চালিয়েছেন, তা একই রকম থাকবে। আমাদের অংশীদারদের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ বা বিচ্ছিন্নতা নেই।’
টিডিপি এবং জেডি (ইউ) উভয় দলই জোর দিয়ে বলছে তারা ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং মুসলিম ভোটারদের সমর্থন তাদের শক্তিশালী করে। বিশ্লেষক এবং অধিকার কর্মীরা বলছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে ভোট রাজনীতি করার অভিযোগ ছাড়াও বেকারত্ব বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও বৈষম্যকে আড়াল করে মিত্ররা মোদি সরকারকে ধরে রাখার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মান্দার বলেন, ‘মোদি গত ১০ বছর যে স্বৈরশাসন চালিয়েছেন এবারের মন্ত্রিসভায় তেমনটি করতে পারবেন না। গত দশ বছরে যেকোনো ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মোদি মন্ত্রিসভার সঙ্গেও পরামর্শ করেননি। এ মন্ত্রিসভায় সে ধারার মৃত্যু হয়েছে বলে আশা করা যায়।’
এমটিআই