ঢাকা : ২০১০ সালে নিজের ওয়েবসাইট ‘উইকিলিকসে’ যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে ২৫ জুন যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। যদিও এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে তাকে।
বিবিসি জানিয়েছে, অ্যাসাঞ্জের কারামুক্তির পেছনে রয়েছে কূটনীতি, রাজনীতি এবং আইনের একটি মিশ্রণ। এই দিনটির জন্য তাকে ৭ বছর স্বেচ্ছানির্বাসন এবং ৫ বছর কারাগারে বন্দি থাকতে হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত মার্চে এমন একটি চুক্তির সম্ভাবনা প্রথম আমাদের নজরে আসে। তারপর থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছি কীভাবে অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেওয়া যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচারকের সামনে হাজির করা যায়।
এই চুক্তির শুরুটা হয় ২০২২ সালের মে মাসে। সে সময় অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে নতুন সরকার। নতুন প্রশাসন বিদেশে আটক থাকা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। তাই ক্ষমতায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছিলেন, অ্যাসাঞ্জ যা কিছু করেছেন তিনি তা সমর্থন করেন না। তবে এখন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা যথেষ্ট এবং তার মুক্তির সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এরপর মার্কিন কংগ্রেসে সরাসরি তদবির করার জন্য সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে যান অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আলবেনিজ অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেন। পুরো বিষয়টি নতুন মোড় নেয় যখন স্টিফেন স্মিথ ২০২৩ সালের প্রথম দিকে অস্ট্রেলিয়ার নতুন হাইকমিশনার হিসেবে লন্ডনে যান।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, স্টিফেন স্মিথ অনেক কিছুই করেছিলেন। ২০২৩ সালের এপ্রিলে বেলমার্শ কারাগারে অ্যাসাঞ্জের সাথে দেখা করেন তিনি। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাসাঞ্জের প্রচারণায় যুক্ত ব্যারিস্টার এবং আইনি উপদেষ্টা গ্রেগ বার্নস বলেছেন, রাজনীতিই একটি পার্থক্য তৈরি করেছে। মূলত আলবানিজ সরকারই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করে। ক্ষমতাসীনরা এজন্য বিরোধীদের সমর্থনও পায়।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ১৭টি অভিযোগ রয়েছে এবং এর একটি হ্যাকিংয়ের জন্য। গুপ্তচরবৃত্তির প্রত্যেকটিতে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং হ্যাকিংয়ের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত কারাভোগের সাজা রয়েছে দেশটিতে। চলতি বছরের ২০ মে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট অ্যাসাঞ্জকে একটি আইনি সুযোগ দেয়। এটি রায় দেয় সামরিক তথ্য প্রকাশের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের জন্য প্রত্যর্পণ করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জ আপিল করতে পারবেন।
সিপিএসের সাবেক প্রধান নিক ভামোস জানান, এই রায়টি চুক্তিটি সম্পূর্ণ করার জন্য উভয়পক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অপরদিকে এমন চুক্তিতে রাজি হওয়ার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের আগস্টে রাষ্ট্রদূত কেনেডি প্রকাশ্যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এই চুক্তি একটি সমাধান নিয়ে আসতে পারে।
পরে এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে বিচার প্রত্যাহারের অনুরোধ বিবেচনা করছেন। মার্কিন কূটনীতিকরা অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী। ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন আসন্ন নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই সমস্যাটির সমাধান চেয়েছিল। যদিও হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই চুক্তিতে হোয়াইট হাউস কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এটি বিচার বিভাগের বিষয় ছিল।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :