ঢাকা : টানা চতুর্থবারের মত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিক রাজনীতিতে নাম লেখাবেন সেটা মা হিসেবে এক সময় চাননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা।
তার ভাষ্য, রাজনীতির মাঠে টিউলিপ যে সফলতা পেয়েছেন, তাতেও মা হিসেবে তার কোনো ‘অবদান নেই’।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দিনভর ভোটগ্রহণের পর গভীর রাতে আসা ফলে দেখা যায়, কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামসকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ। নির্বাচনের লড়াইয়ে তিনি উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনে প্রার্থী ছিলেন।
ভোটের ফল পাওয়ার পর সময় টিভিকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় শেখ রেহানা বলেন, আমি আসলে স্বপ্ন দেখিনি যে-সে (টিউলিপ) রাজনীতিতে আসুক; এটা তার নিজের ইচ্ছা। আমি চাচ্ছিলাম সে…টিচার হোক, জজ-ব্যারিস্টার হোক বা অন্য কিছু হোক।
কিন্তু রাজনীতিতে সে চলে গেছে, এখানে আমার অবদান নেই- সম্পূর্ণ তার নিজের চেষ্টায়। মা হিসেবে আমার যতটুকু করার, মা হিসেবে সন্তানকে যেভাবে দেখার- আমি সেভাবেই দেখি।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করেন টিউলিপ, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হন।
২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ। ২০১৫ সাল থেকে টানা চতুর্থবারের মতো হ্যাম্পস্টেড থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
শেখ রেহানা বলেন, আমার মেয়ে আবার এমপি নির্বাচিত হল। মানুষের সেবা যেখানে দরকার, সেখানেই নিষ্ঠার সাথে করবে। শুধু নির্বাচনের সময় সে কাজ করেনি এলাকায়, সারাবছরই কাজ করে। সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা লালনপালন করে অন্য লোকের সেবা করা- বিদেশে যেটা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থিতার কারণে টিউলিপ সব সময়ই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ৪১ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিককে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
টিউলিপের মা বলেন, “সে তার জীবনটা উৎসর্গ করেছে ইথিকসের রাজনীতিতে। পরিচয় তার প্রয়োজন হয় না। সবার কাছে দোয়া চাই, সে যেন তার কাজ সততা, নিষ্ঠার সাথে করতে পারে।
মানুষের সেবা যেখানেই যে এলাকায় হোক- শুধু নির্বাচনি এলাকায় না, যেখানেই অসহায়ের পাশে সে থাকবে। এবং সবার সেবার জন্য তার জীবন নিয়োজিত করবে। সবার কাছে দোয়া চাই যেন সে সবসময় সৎভাবে থাকতে পারে।
এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির বিপুল বিজয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কিয়ার স্টারমার। নিজের আসন হলবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যখন সমর্থকদের সামনে হাজির হন, টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি হিসাবে ছায়া সরকারে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা টিউলিপ এবার লেবার সরকারের মন্ত্রী হতে পারেন বলেও জোর আলোচনা আছে।
ভোটে জয় পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ বলেন, “সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের দোয়ায় আমি চতুর্থবার নির্বাচিত হলাম। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাকে সবসময় সাপোর্ট করে। আমি খুব গ্রেটফুল, এইবারও উনারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন।
আমি চাই যে- আমাদের আরও তিনটা বোন যে আছে- রূপা, রুশনারা, আফসানা- সবাই যেন জয়ী হয়, আমরা সবাই যেন লেবার গভমেন্টে সার্ভ করতে পারি।
এমটিআই