ঢাকা : ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত ভোটে কট্টরপন্থী সাইদ জালিলিকে হারিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৬ জুলাই) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, শুক্রবারের নির্বাচনে সাঈদ জালিলির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট পেয়েছেন। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী জালিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ভোট।
বেশ কয়েক বছর পর ইরানের মসনদে বসলেন দেশটির সংস্কারপন্থী কোন নেতা। ইরানের ক্ষমতা বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের হাতে রয়েছে। তবে পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সংস্কারপন্থিরা আশার আলো দেখছেন।
১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের শহর মাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি তার ডিপ্লোমা লাভ করেন।
১৯৮০-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় সম্মুখ সারিতে থেকে সেবা প্রদান করেছেন পেজেশকিয়ান। যেখানে তিনি মেডিকেল টিম পাঠানো এবং একজন যোদ্ধা এবং ডাক্তার হিসাবে কাজ করেছেন।
৬৯ বছর বয়সী মাসুদ পেজেশকিয়ানের একজন স্বনামধন্য হৃদ্রোগবিষয়ক সার্জন। তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সাইন্সের সাবেক প্রধান ছিলেন। এটি ইরানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান মেডিকেল প্রতিষ্ঠান।
ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থী জোট তাঁকে সমর্থন দিয়েছে। সাবেক দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
মাসুদ পেজেশকিয়ান সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির সরকারে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ইরানের পার্লামেন্টে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শহর তাবরিজে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি।
পেজেশকিয়ান এর আগে ২০১৩ ও ২০২১ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।
মাসুদ পেজেশকিয়ান বরাবরই ইরানের সংস্কারের পক্ষে। একাধিকবার দেশটির সমাজ সমালোচনা করেছেন তিনি। ইরানের কুখ্যাত নৈতিকতা পুলিশের সমালোচনাও করেছিলেন তিনি। তার এক বক্তৃতায় ইরানে বিক্ষোভকারীদের সাথে যেভাবে আচরণ করা হয়েছিল তার সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
এছাড়া পেজেশকিয়ান ইরানে ২০১৮ সালের বিক্ষোভ পরিচালনার সরকারি পদ্ধতিকে "বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ভুল" বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সব ঘটনার জন্য দেশের ব্যবস্থাকে দায়ী করে বলেন, ‘আমাদের আরও ভালো করা উচিত ছিল।‘
নির্বাচনের প্রচারণায় পেজেকশিয়ান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ইরান থেকে হিজাব আইন প্রত্যাহারের। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। এখন দেখার বিষয় কট্টরপন্থী দ্বারা চালিত দেশটিতে কতটুকু সংস্কার আনতে পারেন তিনি।
ইরানের সর্বশেষ সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামিও পেজেশকিয়ানের প্রশংসা করেছেন। তিনি তাকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও যত্নশীল মানুষ বলে উল্লেখ করেন।
এমটিআই