ঢাকা : যুক্তরাজ্যে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে নেতা কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি। ইতোমধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন স্টারমার। এরপরই আলোচনায় এসেছে তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি ভিক্টোরিয়া স্টারমারের নাম।
স্বামীর রাজনৈতিক পথচলায় নিজেকে অনেকটা অন্তরালেই রেখেছেন স্ত্রী ভিক্টোরিয়া। নিভৃত এই জীবনে জনসম্মুখে আসা তিনি এড়িয়ে চলেছেন। নির্বাচনি প্রচারণার পুরোটা সময় ভিক্টোরিয়াকে প্রায় দেখাই যায়নি।
লেবার দলের সম্মেলন, রাষ্ট্রীয় ভোজসভার মতো কিছু জায়গায় অল্পসংখ্যকবার দেখা গেছে তাকে।
ব্রিটিশ বেতার স্টেশন এলবিসি-তে স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার এই আড়ালে থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে কিয়ার স্টারমার বলেন, এর কারণ দুটো।
প্রথমত: ভিক্টোরিয়া ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) চাকরি করেন। তিনি একাজ করতে পছন্দ করেন। আর দ্বিতীয়ত: তাদের বড় ছেলে সেকেন্ডারি এডুকেশন (জিসিএসই) পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। ছেলের পরীক্ষার সময়টি তার দিকে লক্ষ্য রাখার জন্যই ভিক্টোরিয়া নির্বাচনী প্রচারে বেশি সময় দেননি।
স্টারমার বলেন, তিনি বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকার সময়ে সন্তানের বেড়ে ওঠায় যেন বিঘ্ন না ঘটে এবং সে যাতে শান্ত, সাধারণ পরিবেশে পড়াশুনা করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার ব্যাপারে তারা দুইজনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তবে কিয়ার স্টারমার এখন নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তার স্ত্রী ফাস্র্ট লেডি স্টারমারের পক্ষে স্পটলাইট এড়ানো সহজ হবে না।
স্টারমার ও ভিক্টোরিয়ার পরিচয় ২০০০-এর দশকে। তখন স্টারমার রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন ব্যারিস্টার। একটি মামলা লড়ছিলেন স্টারমার, ভিক্টোরিয়া ওই একই মামলায় একজন আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বিবিসি জানায়, কিয়ার স্টারমার আইটিভি-র পিয়ার্স মরগানের ‘লাইফ স্টোরিজ’ অনুষ্ঠানে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা বলেন।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে স্টারমার বলেছিলেন, "আমি আদালতে একটি মামলা লড়ছিলাম। আমার কাছে থাকা নথিগুলি সঠিক কি-না তার উপর মামলাটি নির্ভর করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, নথিগুলো কে যাচাই করেছেন। তখন তারা বলেছিল ভিক্টোরিয়া নামের একজন নারী। তখন আমি বলেছিলাম চলুন তার সাথে দেখা করে আসি।"
সেই প্রথম পরিচয়ের পর লন্ডনের ক্যামডেনের একটি পাবে প্রথম সাক্ষাৎ করতে যান তারা। এর কয়েক মাস পরই তারা গ্রিসে ছুটি কাটাতে যান। সেখানেই স্টারমার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ২০০৭ সালে তারা বিয়ে করেন।
ভিক্টোরিয়া মানুষ হিসেবে অসাধারণ, এমনটাই বর্ণনা করেছেন স্টারমার তার জীবনী লেখক টম ব্ল্যাডউইনের কাছে। একটি বেতার অনুষ্ঠানে স্টারমার তার স্ত্রী কে “মাই কমপ্লিট রক" বলে অভিহিত করেন।
স্টারমার-ভিক্টোরিয়া দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। তবে তারা পুরোপুরিভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। এমনকি জনসম্মুখের তাদের নাম পর্যন্ত বলা হয়নি।
লেডি স্টারমারের বেড়ে ওঠা উত্তর লন্ডনে। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও সমাজবিজ্ঞান পড়ার আগে তিনি চ্যানিং স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৯৪ সালে ছাত্র সংসদের সভাপতি হন।
ছাত্র সংবাদপত্র গায়ার রাইডের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক খরচ কমাতে কাজ করেছিলেন তিনি।
গত মে মাসে ‘টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টারমার বলেছিলেন, লেডি স্টারমার বর্তমানে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কাজ করেন। আমি নির্বাচনে জয়ী হলেও ভিক্টোরিয়া তার চাকরি চালিয়ে যাবেন। তিনি তার কাজকে ভালোবাসেন। কারণ, তার কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে পারেন।
এই দম্পতি নিজেদের জীবনকে তাদের সন্তানের জন্য যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখতে চাইলেও সেটি সব সময় হয়ে ওঠে না কিয়ার স্টারমারের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে।
সেমন: স্টারমারের ইসরায়েলপন্থি নীতির কারণে গত এপ্রিলে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা তাদের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ করে। একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় এবং সামনের দরজার বাইরে শিশুদের জুতা রাখে।
ফার্স্ট লেডি ভিক্টোরিয়া বাইরে থেকে ফিরে এসে বিক্ষোভকারীদের দেখতে পান।
প্রতিবাদ দেখে তার অনুভূতি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে ভিক্টোরিয়া বলেন, “সত্যি কথা বলতে, আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম।”
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :