ঢাকা : যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বেঁচে থাকা বাসিন্দারা জীবন হাতে ছুটছে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। ইসরায়েলি বাহিনীর তাড়ার যেন অন্ত নেই।
বুধবার (১০ জুলাই) গাজা সিটিতে আকাশ থেকে হাজার হাজার লিফলেট ফেলেছে তারা। সেখানে গাজা শহরের সব বাসিন্দাকে শহর থেকে আরও দক্ষিণে যেতে বলা হয়েছে। অথচ সেখানে যুদ্ধ চলছে।
লিফলেটে সতর্ক করে বলা হয়েছে, হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলে শহুরে এলাকা ‘একটি বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে। তাই দ্রুত শহর ছাড়তে হবে।’ খবর আলজাজিরার।
এর আগে ২৭ জুন শহরের একটি অংশ থেকে বাসিন্দাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
তবে বুধবার (১০ জুলাই) আকাশ থেকে ফেলা লিফলেটগুলোতে বলা হয়েছে, বাসিন্দাদের গাজা সিটি থেকে দেইর আল-বালাহ এবং আল-জাওইয়াতে আশ্রয়কেন্দ্রে দুটি নিরাপদ সড়ক বেছে নিতে হবে। ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলা এমন দুটি লিফলেট নিয়ে আহমেদ আশরাফ এবং মোহাম্মদ আবু নাসিম নামে দুই যুবক বলেন, এই ৩০০ দিনের নিপীড়নের পর আমরা আর কোথায় যাব?
ইসরায়েলি বাহিনীদের উদ্দেশে তারা বলেন, ‘তোমরা কি আমাদের দক্ষিণের দিকে যেতে নির্দেশ করছ?’ জাতিসংঘ ইসরায়েলের এই আদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের এমন অঞ্চলে যেতে বলেছে যেখানে যুদ্ধ চলছে।
এদিকে ফিলিস্তিন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরের পুরো জনসংখ্যাকে ‘জাতিগতভাবে নিধন’ করার চেষ্টা করছে। তারা কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের শহর এবং বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে।
নেতানিয়াহুর সরকার গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূলের মূল লক্ষ্য থেকে এখনো সরে যায়নি। আর এ কারণে তারা এসব লিফলেট ফেলে তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে।
গত সপ্তাহে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত বলেছেন, যে অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এদিকে বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ২০৮ জন। এ ছাড়া গত ৭ অক্টোবর থেকে থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ২৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ৮৮ হাজার ২৪১জন।
তবে চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের দাবি, ফিলিস্তিনের গাজায় ৯ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এক চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে ল্যানসেটের বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহত ব্যক্তির যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভবত সেটি নাটকীয়ভাবে কম।
ইসরায়েলি হামলায় এ উপত্যকার বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজারো মানুষ এবং খাবার, চিকিৎসাসেবা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সংকটে পরোক্ষভাবে যে বহু মানুষ মারা গেছে, তাদের ওই হিসাবে বিবেচনায় আনা হয়নি।
অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছেছে। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করার জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।
ইসরায়েল এবং গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে ডেনিয়েল লেভি নামে একজন সাবেক ইসরায়েলি শান্তি আলোচনাকারী বলেন, বর্তমানে টেবিলে থাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি যেভাবে গঠন করা হয়েছে তা যুদ্ধের অবসানের পথ প্রশস্ত করতে পারে, তবে সেই চুক্তিতে যেটি অনুপস্থিত; তা হলো ইসরায়েলের নেতৃত্বের একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এমন অবস্থাতেই নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে হাস্যকর দাবি করেছেন।
তিনি বলেছেন, গাজায় যেকোনো যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার সুযোগ থাকতে হবে।
রোববার শেষ রাতে তিন ধাপের মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে নেতানিয়াহুর একটি বৈঠক করার কথা ছিল। মে মাসে এ পরিকল্পনাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উপস্থাপন করেন। এতে কাতার ও মিসর মধ্যস্থতা করছে। এটির লক্ষ্য যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং গাজায় আটক থাকা প্রায় ১২০ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা।
এমটিআই