ঢাকা : ভেনেজুয়েলায় রোববারের নির্বাচনের বিতর্কিত ফলাফল ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন। শহরের আশপাশের এলাকা থেকেও অনেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের অভিমুখে যাত্রা করেন। খবর বিবিসির।
নির্বাচনের ফলাফলে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জয়ী হয়েছেন দাবি করার পরদিনই ভেনেজুয়েলার রাজধানীতে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধীরা মাদুরোর বিজয় ঘোষণাকে ‘জালিয়াতি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের দাবি, প্রকৃতপক্ষে বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেজ ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে তার জয়ের স্পষ্ট আভাস ছিল।
দেশটির অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অসন্তোষের মধ্যে ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গঞ্জালেজের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো একত্রিত হয়েছিল।
বেশ কয়েকটি পশ্চিমা ও লাতিন আমেরিকার দেশ, পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা ভেনেজুয়েলা কর্তৃপক্ষকে ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া ভোটদানের রেকর্ড (তথ্য-উপাত্ত) সরাসরি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে।
আর্জেন্টিনা ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিজয়কে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভেনেজুয়েলা বুয়েনস এইরেস থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করেছে। এ ছাড়া দেশটি লাতিন আমেরিকার আরও ছয়টি দেশ চিলি, কোস্টারিকা, পানামা, পেরু, ডোমিনিকান রিপাবলিক ও উরুগুয়ে থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম ও বিবৃতিকে’ কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷
সোমবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এবং তাদেরকে প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে যেতে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে কারাকাসের রাস্তায় জলকামান ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ সামরিক বাহিনীর সদস্য ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা!’ বলে এবং সরকার পতনের আহ্বান জানায়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মহাসড়কে টায়ার জ্বলছে এবং রাস্তায় বিপুল মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। মোটরবাইকে থাকা পুলিশ তাদের দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। কিছু এলাকায় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং টায়ার, গাড়ি ও বিভিন্ন কিছুতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সরকারের অনুগত সশস্ত্র পুলিশ, সামরিক এবং বামপন্থি আধাসামরিক বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে এবং তারা শহরের কেন্দ্রের চারপাশের অনেক সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল সতর্ক করে বলেছেন, বিক্ষোভের অংশ হিসেবে রাস্তা অবরোধ করা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচনি সরঞ্জাম ধ্বংস করা থেকে শুরু করে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগে ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘ঘোষিত ফলাফল প্রথমিক গণনা প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য উত্সের মাধ্যমে আমরা যে ডেটা পেয়েছি তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, তা জনগণের ভোটের সঙ্গে বৈপরীত্য ঘটে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এটি আমাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ।’
মার্কিন কর্মকর্তারা আরও বলেন, ‘আমরা ভেনেজুয়েলার নির্বাচনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্নিহিত ডেটা প্রকাশ করতে বলছি, যা তাদের ঘোষিত ফলাফলকে সমর্থন করে।’
ভেনেজুয়েলার ফলাফল নিয়ে অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) বুধবার স্থায়ী কাউন্সিলের সভা আহ্বান করেছে।
এমটিআই