ঢাকা : গণ অভ্যুত্থানে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের পরিবার ক্ষমতা হারানোর পর আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রথম নির্বাচন হতে চলেছে শ্রীলঙ্কায়। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দেশটির দুঃসময়ে দেশের হাল ধরা রনিল বিক্রমাসিংহেও।
গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কলম্বোয় নিজের শেষ নির্বাচনি সমাবেশে ৭৫ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ‘আমাদের দেউলিয়াত্ব শেষ করতে সংশোধন নিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের নতুন অর্থনীতি তৈরি করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিন আপনারা আবার সেই আতঙ্কের সময়ে ফিরতে চান, নাকি উন্নতি চান।’
তবে বিক্রমাসিংহের জয়ের আশা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৩৮ জন। কিন্তু কোনো নারী প্রার্থী নেই। প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন গুটিকয়েকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে, রাজপক্ষের আমলে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সাজিদ প্রেমাদাসা, বামপন্থি দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অনুরা কুমারা দিসানায়েকে এবং রাজাপক্ষে পরিবারের নমল রাজাপক্ষে।
নির্বাচন সামনে রেখে ৪৮ ঘণ্টা আগে বুধবার নিজ নিজ প্রচার শেষ করেন প্রার্থীরা। তারা সবাই দেশের অর্থনীতিকে বলিষ্ঠ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটির এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ভোটার।
পুরো দেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে দুই লাখেরও বেশি নির্বাচনি কর্মকর্তা কাজ করবেন বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় সুরক্ষা দিতে কাজ করবেন ৬৩ হাজার পুলিশ সদস্য। ফলাফল রবিবার নাগাদ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, শ্রীলঙ্কার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাঁচটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেগুলো হলো অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি, আইএমএফ কর্মসূচি ও ঋণ পুনর্গঠন, কর আরোপ, চাকরি ও সামাজিক সুবিধা এবং ভূ-রাজনীতি।
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে যখন ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল তলানিতে। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য হাতের কাছে পাচ্ছিলেন না, ওষুধের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছিল, বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছিল দেশটির অনেক জনসাধারণকে। এ ছাড়া মাথায় ছিল বৈদেশিক ঋণের বোঝা।
বর্তমানে সে অবস্থা থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এখনো পুরোপুরি কাটেনি। চাকরি নিয়েও সমস্যা রয়েছে। দেশের বহু মানুষকে উচ্চ কর দিতে হচ্ছে। এতে করে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। অনেককে দুটি চাকরি করে খরচ চালাতে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শ্রীলঙ্কানরা বেশ আগ্রহী থাকলেও এতে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী তামিলদের খুব একটা লাভ হবে না বলে তারা মনে করছেন। তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন, শনিবারের (আজ) নির্বাচনের ফলাফলে হয়তো তাদের উন্নতিকে খুব একটা প্রভাবিত করবে না।
শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। তাদের মধ্যে ১২ শতাংশ তামিল। তবে নির্বাচনে তারা অবহেলিত থেকে যায় এ রকম একটা অভিযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনে সিংহভাগ প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলা জনগোষ্ঠীর। এ কারণেই প্রার্থীদের কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করছেন না তামিলরা। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স
এমটিআই