ঢাকা : ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শেষ করার ঘোষণা দিয়ে আর উস্কানি না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছে ইরান, কিন্তু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিস্তৃত একটি যুদ্ধের আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) সামাজিক মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, “আমাদের পদক্ষেপ শেষ হয়েছে, যদি না ইসরায়েলি শাসক আরও প্রতিশোধের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের জবাব আরও জোরালো ও শক্তিশালী হবে।”
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, মঙ্গলবারের হামলার জন্য ইরানকে ‘গুরুতর পরিণতির’ মুখোমুখি করা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবে।
ইসরায়েল জানায়, ওই হামলা চালাতে ইরান ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা সংস্থা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার এক বৈঠক ডেকেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েল বুধবার ভোররাতে লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দক্ষিণ বৈরুতের অবস্থানগুলোতে ফের বোমা হামলা শুরু করেছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গোষ্ঠীটির লক্ষ্যস্থলগুলোতে অন্তত একডজন বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার পর বৈরুতের দক্ষিণাংশের এলাকাগুলো থেকে বড় ধরনের ধোঁয়ার কুণ্ডুলি উঠতে দেখা গেছে।
বাসিন্দাদের ওই সব এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নতুন করে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। তবে এর আগেই কয়েকদিন ধরে চলা ব্যাপক ইসরায়েলি বোমা হামলার মুখে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় এলাকাগুলো প্রায় লোকশূন্য হয়ে আছে।
ইরানের এ হামলাকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সামরিক ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
হামলার সময় পুরো ইসরায়েলজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। দেশটির সব মানুষকে বোম্ব শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যেই জেরুজালেম ও জর্ডান নদী উপত্যকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এ হামলায় ইসরায়েলের কেউ হতাহত না হলেও অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইরান এই হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক’ বলে বর্ণনা করে জানিয়েছে, শুধু ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বলেছে, ইসরায়েলের তিনটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়েছিল।
তেহরান জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা এবং গাজা ও লেবাননে আগ্রাসন চালানোর দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হ্যাগারি এক্স এ পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেছেন, “ইরানের হামলা মোকাবেলায় ইসরায়েল এয়ার ডিফেন্স সচল করে আর অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোট বাধা দিয়ে ধ্বংস করে। ইরানের হামলা একটি মারাত্মক ও বিপজ্জনক উস্কানি।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা আঘাত হানার প্রত্যয় জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে জরুরি রাজনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আজ রাতে ইরান একটি বড় ভুল করেছে আর এর জন্য তাদের মূল্য চুকাতে হবে।”
এক বিবৃতিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছে, ইসরায়েলের যে কোনো জবাবে দেশটির অবকাঠামোর ‘ব্যাপক ধ্বংসসাধন’ করা হবে। ইসরায়েলের যে মিত্ররাই তাদের সঙ্গে যোগ দেবে তাদের আঞ্চলিক সম্পদও ইরানের হামলার লক্ষ্য হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।
এসব পাল্টাপাল্টি বিবৃতি ও হুমকি ধামকির কারণে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বড় ধরনের যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে।
এমটিআই