ঢাকা: ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েল দ্রুত প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইসরায়েলের পাল্টা জবাব কতটা ভয়াবহ হবে? ইরানি তেলের স্থাপনা কিংবা পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো লক্ষ্যবস্তু হতে পারে? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কূটনৈতিক পথে চলবে তারা? মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার ইসরায়েলের এক সরকারি কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেন, দেশটি দ্রুত প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সামরিক ও গোয়েন্দা নেতারা প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছেন। তবে আসন্ন রোশ হাশানা (ইহুদি নববর্ষ) এবং অন্যান্য ছুটির কারণে সময় নির্ধারণ জটিল হয়ে পড়েছে। তবুও, ইসরায়েল দ্রুত আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত।
এই অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি একের পর এক উত্তেজনা বৃদ্ধির চক্র। ইসরায়েল অবশ্য গুতেরেসকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেছে। ইরানের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কোনও নিন্দা প্রকাশ না করায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল যদি কোনও ভুল করে, তবে তারা আরও ভয়ানক জবাব পাবে।
এই পরিস্থিতি পশ্চিমা দেশগুলো এবং বিশ্লেষকদের মনে বড় আশঙ্কা তৈরি করেছে। ইরানের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত সরাসরি তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে চান। এ পর্যন্ত তার লক্ষ্য ছিল গাজা আক্রমণ করে হামাসকে দুর্বল করা এবং বিশেষ করে নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে হিজবুল্লাহর নেতৃস্থানীয় কমান্ড কাঠামো ধ্বংস করা।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে প্রচুর সংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের লেবানন বোমা হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। যাদের মধ্যে ১০০ শিশু রয়েছে।
এর আগেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় ধরনের পাল্টা হামলা থেকে বিরত রেখেছিল। তবে এবার নেতানিয়াহু আরও কঠোর জবাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন। মঙ্গলবার হামলার পর তিনি বলেছেন, ইরান আজ রাতে একটি বড় ভুল করেছে, এবং এর জন্য মূল্য দিতে হবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টও ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা একটি চরম মূল্য দিতে বাধ্য হবে।
ইসরায়েলের ভেতরের ও বাইরের অনেকেই এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আক্রমণ চালানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক বুর্কু ওজচেলিক বলেন, এই ধরনের হামলা উত্তেজনা বাড়ানোর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং এর ফলে অপ্রত্যাশিত ঘটনার চক্র শুরু হতে পারে। যা পশ্চিমা স্বার্থকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান এখন ‘থ্রেশহোল্ড স্টেট,’ অর্থাৎ তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার সব উপাদান রয়েছে। ইসরায়েলের কিছু রাজনীতিবিদ এখন এটিকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প এবং তেলের অবকাঠামোতে আঘাত হানার জন্য। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেছেন, আমাদের এখনই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতিতে কতটা সম্পৃক্ত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে এবং এর যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের দিকে ছোঁড়া কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও একটি সামরিক অভিযানের পাল্টা হামলায় নতুন সংঘাত তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যে কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতি বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে।
এম