ঢাকা : সর্বদা জনকল্যাণকর কাজে ব্যস্ত থাকতে বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং টাটা সন্সের সাবেক চেয়ারম্যান রতন টাটা। জনহিতকর প্রচেষ্টার জন্য তার সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি ছিল টাটা ন্যানো গাড়ি বাজারে নিয়ে আসা।
মধ্যবিত্তসহ প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের কাছে ব্যক্তিগত পরিবহন সহজলভ্য করার জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন তিনি। বাজারে নিয়ে আসেন সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি ন্যানো। যদিও সেই গাড়িটির প্রথম ডিজাইন ছিল খুবই অদ্ভুত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং নিউজ ১৮।
কীভাবে ওই গাড়ির পরিকল্পনা তার মাথায় এলো সেটাও জানিয়েছিলেন রতন টাটা।
২০০০ দশকের শুরুতে রতন টাটা একদিন এক পরিবারকে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে গাদাগাদি করে স্কুটার চালাতে দেখেন। স্কুটারে যেভাবে গোটা পরিবারের সবাই মিলে যেতেন, এই অভিজ্ঞতা তাকে ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটি ছোট, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং নিরাপদ গাড়ি তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
টাটা মোটরস টিম এমন একটি গাড়ি তৈরি করেছিল যেটি কম দাম এবং নিরাপদ ছিল৷ তারা এমন একটি গাড়ি তৈরি করেছিল যা আরামদায়কভাবে চারজন বসতে পারে এবং একটি জ্বালানী-দক্ষ ইঞ্জিন ছিল। গাড়িটির নাম দেয়া হয়েছিল 'ন্যানো', গুজরাটি ভাষায় যার অর্থ 'ছোট'।
পরবর্তীতে এই ন্যানো গাড়িটি ভারতে জনগণের গাড়ি হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
২০০৯ সালে ন্যানো গাড়ি বাজারে নিয়ে আসা ভারতের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক তৈরি করে। মাত্র এক লাখ রুপি এবং কমপ্যাক্ট ডিজাইনের কারণে গাড়িটি বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করে।
টাটা ন্যানো উৎপাদন প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে চালু করা হলেও বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জনের পরে, এর উৎপাদন গুজরাটে স্থানান্তরিত হয়।
রতন টাটা জানিয়েছিলেন যে, ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির পরিকল্পনা যে সময়ে তার মাথায় এসেছিল, তার বহু আগেই নাকি তিনি এই গাড়ির ডিজাইন করতে শুরু করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, সেই সময়ে তার মাথায় একটা ভাবনাই আসতো— দুই চাকার যাত্রীদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায়।
রতন টাটা জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক কাঠামোয় কোনও জানলা, দরজা ছিল না। সে সব আঁকেননি তিনি। শুধু কাঠামোটিই ডিজাইন করেন। পরে নিজের ডিজাইনটিই ভালো লেগে যায়। তিনি ঠিক করেন, এই গাড়িটি বানাবেন। এর পর সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই ন্যানোর ডিজাইন করেন তিনি।
ন্যানোকে ঘিরে প্রাথমিক উত্তেজনা এবং প্রত্যাশা সত্ত্বেও, গাড়িটি ভারতের বাজারে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। ভোক্তা, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং উৎপাদন প্রতিবন্ধকতা সহ নানা বিষয়গুলি এর সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করে তুলে।
তবে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রতন টাটা তার এই প্রকল্পের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। ক্রমাগত ন্যানোকে উন্নত করতে এবং গ্রাহকদের সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি।
এমটিআই