ঢাকা : ইতিহাস গড়েই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তৃতীয় দফায় ভোটের লড়াইয়ে নেমে জয়ী হয়ে ভেঙেছেন ১৩২ বছর আগের এক রেকর্ড। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন নব-নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনি প্রচারে বেশ অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে কিছু কিছু কাজ তিনি ক্ষমতায় বসার সাথে সাথেই করতে চান বলে জানিয়েছিলেন। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই যে সাতটি কাজ করতে চান। খবর বিবিসি।
১. অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন : যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সব সময়ই বেশ সোচ্চার ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতবারের ন্যায় এবারও প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড়’ অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তার প্রথম শাসনামলে শুরু হওয়া মেক্সিকো সীমান্তের দেওয়ালের নির্মাণকাজ শেষ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন দেখার বিষয় অভিবাসীদের বিষয়ে কতটুকু সফল হতে পারেন তিনি।
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রতিশ্রুতি পূরণে আইনগত এবং পরিচালনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে ট্রাম্পকে এবং এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।
২. অর্থনীতি, কর ও শুল্ক নিয়ে পদক্ষেপ : বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতি কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রেসিডেন্টের সরাসরি প্রভাব খুবই সীমিত। তবে তিনি নতুন কর ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেমন- বকশিস কর, সামাজিক সুরক্ষা কর ও করপোরেশন কর।
ট্রাম্প বেশিরভাগ বিদেশি পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং চীনা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। তবে এই ধরনের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সতর্কতা দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
৩. জলবায়ু সম্পর্কিত বিধিনিষেধ শিথিল : প্রথম প্রেসিডেন্সিতে ট্রাম্প কয়েকশ পরিবেশগত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিশেষ করে মার্কিন গাড়ি শিল্পকে সাহায্য করার জন্য।
তিনি আর্কটিক প্রান্তে তেল খননের পরিকল্পনা করেছেন। এতে জ্বালানি খরচ কমবে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। যদিও এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
৪. ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি : আলোচনার মাধ্যমে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের সমাপ্তি করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া এই যুদ্ধে ইউক্রেনের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ব্যয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। তবে তার এই পদক্ষেপ রাশিয়াকে উৎসাহ দেবে বলে অভিযোগ ডেমোক্রেটদের।
যে কোন যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখতে চান ট্রাম্প। তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক হলেও গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তবে কীভাবে এসব করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।
৫. গর্ভপাত নিষিদ্ধ নয় : কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কে ট্রাম্প জাতীয়ভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার আইনে স্বাক্ষর করবেন না বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, গর্ভপাত নিয়ে আইন তৈরির ব্যাপারে রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা থাকা উচিত।
৬. ৬ জানুয়ারি দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা : ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কিছু ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তারমতে, এই ঘটনায় অনেককে "ভুলভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছে"। তবে এও স্বীকার করেছেন যে সেদিন কয়েকজন সমর্থক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
৭. স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত : প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি তদন্তের নেতৃত্বদানকারী প্রবীণ প্রসিকিউটর স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এমটিআই