• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রথমবার সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, ঝাড়খণ্ডে ভরাডুবি বিজেপির


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
প্রথমবার সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, ঝাড়খণ্ডে ভরাডুবি বিজেপির

ঢাকা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঝাড়খণ্ডে 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের' নিয়ে ভোটারদের মাঝে ভয় ছড়ানোর কৌশল নিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। কিন্তু বিজেপির সেই কৌশল প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ। রাজ্যটিতে আবার ক্ষমতায় ফিরেছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতৃত্বাধীন জোট।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব পড়েনি আরজি কর কাণ্ডের। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার উপনির্বাচনের ছয় আসনের সবগুলোতেই জয় পেয়েছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস।

এছাড়া কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড়ে লোকসভা আসনে ছিল লোকসভা উপনির্বাচন। সেখানে প্রথমবার ভোটে জিতে জয় পেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রাজনীতিতে একাধিক জনসভায় ভাষণ দিলেও এবারই প্রথম তিনি ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন তিনি। সেখানেই উপনির্বাচনে সর্বশেষ তথ্য মতে প্রায় ৪ লাখের ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।

গত ১৩ নভেম্বর ছিল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। একইসাথে পশ্চিমবঙ্গের ৬ আসনসহ ভারতের ১৫টি রাজ্যের ৪৮টি বিধানসভা আসন এবং দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে ছিল উপনির্বাচন।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। তবে উপনির্বাচনের পাশাপাশি সবার নজর ছিল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দিকে।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খন্ডে বিধানসভা ভোট হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি তথা এনডিএ জোট। এই জোট তৈরি হয়েছিল বিজেপি, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা দল এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপি দল মিলে। জোটের বিপক্ষে ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’। সেখানে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী আসনে বসতে চলেছে বিজেপি। এই রাজ্যে মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ২৮৮টি। সরকার গড়তে প্রয়োজন ১৪৫ আসন। বিজেপি তথা এনডিএ জোট পেয়েছে ২২৮ আসন, বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) জোট ৫৪ আসন ও স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ৬ আসন।

অপরদিকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে মূল লড়াই ছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএন) নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস-আরজেডি-সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর  ‘মহাগঠবন্ধন’-এর। সেখানে ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে মহাগঠবন্ধন। রাজ্যটিতে ৮১ বিধানসভা আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ৪১টি আসন, যা দখল করে মহাগঠবন্ধন। অর্থাৎ রাজ্যটিতে আবারও একবার সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। উল্লেখ্য, ১৭ দলের ইন্ডিয়া জোটের কয়েকটি দল মিলিয়ে তৈরি করেছিল ঝাড়খণ্ডে মহাগঠবন্ধন জোট। সেই জোটের নিরিখে ইন্ডিয়া পেয়েছে ৫৭ আসন, এনডিএ পেয়েছে ২৩ এবং স্বতন্ত্র এক আসন।

এদিকে কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড়ে লোকসভা আসনে ছিল লোকসভা উপনির্বাচন। সেখানে প্রথমবার ভোটে জিতে জয় পেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রাজনীতিতে একাধিক জনসভায় ভাষণ দিলেও এবারই প্রথম তিনি ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন তিনি। সেখানেই উপনির্বাচনে সর্বশেষ তথ্য মতে প্রায় ৪ লাখের ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।

চলতি বছরের গত এপ্রিল-মে মাসে, সাত ধাপে ভারতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কেরালার ওয়েনাড় আসন এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ওই দুটি আসন থেকেই প্রায় সাড়ে তিন লাখের বেশি ভোটে জয় পেয়েছিলেন রাহুল। সেক্ষেত্রে রায়বেরেলি আসনটি নিজের দখলে রেখে ওয়েনাড় আসন থেকে পদত্যাগ করেন রাহুল। আসনটি শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণে ওই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। মুসলিম অধ্যুষিত ওয়েনাড় আসনে প্রিয়াঙ্কার প্রতিপক্ষ ছিলেন কেরলের বিজেপির নারী মোর্চার সাধারণ সম্পাদক নভ্যা হরিদাস, সিনিয়র সিপিআই নেত্রী স্বাথ্যন মোকেরী।  

অপরদিকে, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারে সরব গোটা পশ্চিমবঙ্গ। এখনও রাজ্যজুড়ে চলছে আন্দোলন প্রতিবাদ। এরমধ্যে নানা কারণে রাজ্যটির ৬ আসনে ছিল বিধানসভা উপনির্বাচন। এদিনে ফল ঘোষণার পর দেখা গেল কোনো প্রভাবই পড়েনি আরজি কর কাণ্ডের। ছয় আসনের সবকটিতে জয় পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এটাই ছিল ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে মমতার এসিড টেস্ট। এতে একপ্রকার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতল তৃণমূল।

নৈহাটি, হাড়োয়া, তালডাংরা, মেদিনীপুর, মাদারিহাট ও সিতাই; ৬ আসনে সর্বত্রই তৃণমূল প্রার্থীদের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারতে হলো বিজেপিকে। এমনকি গত ৮ বছর ধরে দখলে রাখা মাদারিহাট আসনটিও হাতছাড়া হলো বিজেপির। নৈহাটিতে বিপুল পরিমাণে ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে। ৪৯ হাজার ১৯৩ ভোটে জয়ী পান তিনি। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৬১২। অন্যদিকে, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রূপক মিত্র মাত্র ২৯ হাজার ৪১৯ ভোট পেয়েছেন। একই চিত্র ফুটে উঠেছে সিতাই আসনেও। সেখানে ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৬৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সঙ্গীতা রায়। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দীপক কুমার রায়ের থেকে তিনি প্রায় ৫ গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন।

অন্যদিকে, মাদারিহাট আসনটিও খোয়া গিয়েছে বিজেপির হাত থেকে। এই উপনির্বাচনে বিজেপির একমাত্র শক্ত ঘাটি ছিল মাদারিহাট। কিন্তু সেখানেও হালে পানি পেল না বিজেপি। মাদারিহাটে ২৮ হাজার ১৬৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। এছাড়াও, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, হাড়োয়া সর্বত্রই তৃণমূলের জয়জয়কার। এবারের উপনির্বাচনে বাংলা থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হলো বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!