• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিরিয়া নিয়ে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক, বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
সিরিয়া নিয়ে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক, বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল

ঢাকা : সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের পর দেশ গঠনে মনযোগ দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। ঠিক এই সময়ে দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো। সিরিয়ায় নিজেদের দূত পাঠাচ্ছে তারা। দেশগুলোর লক্ষ্য বাশারের পতনে ভূমিকা রাখা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা।

চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিরিয়া ইস্যুতে কথা বলেছেন তিনি। শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গেও কথা হয়েছে তার।

বাশারের পতনে মূল ভূমিকা রেখেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। এই গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠরাই সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশের সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছে এইচটিএস। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

ব্লিঙ্কেন বলেছেন, সিরিয়ার নতুন সরকারকে মানবাধিকারের মূল নীতিগুলোর প্রতি সম্মান জানাতে হবে, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং সিরিয়া যেন সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটিতে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথম দেশ হিসেবে সিরিয়ায় উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা পাঠিয়েছে তুরস্ক। বৃহস্পতিবার রাজধানী দামেস্কের উমাইয়া মসজিদে তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ইব্রাহিম কালিনকে দেখা গেছে। এই মসজিদেই বাশারের পতনের দিন ভাষণ দিয়েছিলেন এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল জোলানি।

ইব্রাহিম কালিন এমন সময় দামেস্ক সফর করলেন যখন সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তুরস্কের সামরিক বাহিনী এবং দেশটির সমর্থন পাওয়া সশস্ত্র যোদ্ধাদের অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্লিঙ্কেন।

সিরিয়ায় কুর্দি নিয়ন্ত্রিত কিছু অঞ্চল রয়েছে। সেখানে তাদের নিজস্ব সরকার ও সামরিক বাহিনী রয়েছে। এই কুর্দিদের সন্ত্রাসী তালিকায় রেখেছে তুরস্ক। যদিও সিরিয়ায় গত ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে বাশার বা বিদ্রোহী কোনো পক্ষের সঙ্গে ছিল না তারা।

বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়েছে ইসরায়েল : সিরিয়ায় চলমান বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়েছে ইসরায়েল। বাশারের পতনের দিন থেকেই দামেস্কসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ শতাধিক হামলা চালিয়েছে তারা। এতে ধ্বংস হয়েছে সিরিয়ার বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, অস্ত্র উৎপাদন কারখানা, অস্ত্রাগার, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্র।

দুই দেশের সীমান্তে গোলান মালভূমির বাফার জোন বা নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলের দখল নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুধু তাই নয়, ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এই বাফার জোন অতিক্রম করে সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন ইসরায়েলের সেনারা।

ইসরায়েলের ভাষ্য, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সিরিয়ায় অভিযান চালাচ্ছে তারা। আর বাফার জোনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো চুক্তির সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলের দায়িত্ব কার্যকর কোনো বাহিনী না নেওয়া পর্যন্ত সেখানে ইসরায়েলের সেনারা অবস্থান করবে।

এ নিয়ে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলকে একটি বার্তা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নিজেদের সুরক্ষার জন্য গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের সেনাদের অবস্থানের বিষয়টি যৌক্তিক। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই আশা করে যে সেখানে তারা স্থায়ীভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসবে না।

সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। দেশটিতে হামলা চালানো বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেছেন, সিরিয়াজুড়ে সব পক্ষের সহিংসতা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগ : সিরিয়ায় বাশার সরকারের বড় মিত্র ছিল রাশিয়া। বাশারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সিরিয়ায় দুটি সামরিক ঘাঁটিও গড়ে তুলেছিল মস্কো। এখন সেই ঘাঁটিগুলোর সুরক্ষার জন্য সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে তারা।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোদানভ এইচটিএস নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়তে সিরিয়ার অনুরোধেই ঘাঁটিগুলো দেশটিতে স্থাপন করা হয়েছিল। সিরিয়ায় আইএস এখনো নির্মূল হয়নি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার ঐকমত্য নিয়ে আলোচনা করতে চাইছেন তিনি।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!