• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধবিরতি ভেঙে লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ৭


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ২৩, ২০২৫, ১০:২৭ এএম
যুদ্ধবিরতি ভেঙে লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ৭

ফাইল ছবি

ঢাকা: যুদ্ধবিরতি ভেঙে এবার লেবাননে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। গতকাল শনিবার (২২ মার্চ) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক শিশুসহ অন্তত সাতজন নিহত হন। নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর লেবাননে এটিই সবচেয়ে বড় ইসরায়েলি হামলা। 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর রকেট লঞ্চার এবং একটি কমান্ড সেন্টার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এ হামলায় ৪০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, শনিবার লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা দেশটিতে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরু করে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলের মেতুলা শহরের দিকে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তবে এগুলো আটকানো হয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা এই হামলায় জড়িত নয় এবং তারা অস্ত্রবিরতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

লেবাননের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে তিনটি রকেট লঞ্চার নিষ্ক্রিয় করেছে এবং হামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।

এই ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী চাপে পড়েছে। এই চুক্তির আওতায় লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করবে, যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাতে না পারে।

অন্যদিকে, হিজবুল্লাহকে তাদের যোদ্ধা ও অস্ত্র প্রত্যাহার করতে হবে, আর ইসরায়েলি বাহিনী তাদের দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে যাবে।

কিন্তু যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিন হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা বলেছে, এই হামলা অব্যাহত থাকবে যাতে হিজবুল্লাহ পুনরায় অস্ত্র মজুত করতে না পারে।

বর্তমানে ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি অবস্থানে অবস্থান করছে, যা লেবানন সরকার তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছে এবং এটিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবেও দেখছে।

ইসরায়েল বলছে, লেবাননের সেনাবাহিনী এখনও এসব অঞ্চলে সম্পূর্ণভাবে মোতায়েন হয়নি, তাই তাদের নিরাপত্তার জন্য তারা এসব এলাকায় অবস্থান করছে।

এই পরিস্থিতি লেবাননের সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ হিজবুল্লাহ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের স্থানীয় সমর্থনও রয়েছে।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওন বলেছেন, শুধুমাত্র রাষ্ট্রের কাছেই অস্ত্র থাকা উচিত, যা হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

শনিবার তিনি "লেবাননকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা"র নিন্দা জানিয়েছেন, আর প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম বলেছেন, এই সংঘর্ষ দেশকে আরেকটি যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে।

লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন (ইউনিফিল) জানিয়েছে, তারা সম্ভাব্য সংঘর্ষ বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন এবং উভয় পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।

লেবাননের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা বলছে, দেশটিকে সহায়তা করতে হলে সরকারকে হিজবুল্লাহর কার্যক্রম সীমিত করতে হবে।

হিজবুল্লাহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরদিন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান শুরু করে, দাবি করেছিল তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে।

এই সংঘাতের ফলে ইসরায়েল লেবাননের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় এবং দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান পরিচালনা করে।

এতে লেবাননে প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক এবং ১২ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

এসআই

Wordbridge School
Link copied!