• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন চ্যাট ফাঁস, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ২৫, ২০২৫, ১১:১০ এএম
ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন চ্যাট ফাঁস, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর একটি হলো কখন এবং কোথায় সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এই ধরনের গোপন তথ্য যদি শত্রুদের হাতে পড়ে, তাহলে তা দেশের স্বার্থের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হলো, হোয়াইট হাউসের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ‘সিগনাল’ এ হওয়া একটি চ্যাটে ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শত্রুপক্ষের হাতে পৌঁছায়নি।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই গোপন তথ্য পর্যবেক্ষণ করেছেন দেশটির প্রভাবশালী সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গ। খবর বিবিসির। 

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) দ্যা আটলান্টিক পত্রিকার সম্পাদক গোল্ডবার্গ জানান, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ ভুলবশত তাকে এই চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেন।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চ্যাটে অংশ নেওয়া সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, সিআইএ পরিচালক জন র‌্যাটক্লিফ, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ।

মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “চ্যাট মেসেজগুলো সত্য বলে মনে হচ্ছে।”

গোল্ডবার্গ জানান, গ্রুপ চ্যাটে নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং আসন্ন মার্কিন সামরিক হামলার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা দলের অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালির একটি বিরল কথোপকথন।

শনিবার (১৫ মার্চ) ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলা সম্পন্ন হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওয়াল্টজ চ্যাট গ্রুপে লিখেছিলেন— ‘দারুণ কাজ!’ সেই সঙ্গে তিনি আমেরিকার পতাকা, একটি ঘুষির চিহ্ন ও আগুনের ইমোজি যুক্ত করেছিলেন। পরে অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও এই সফল অভিযানের জন্য অভিনন্দন জানান।

কিন্তু এই সাফল্যের মুহূর্ত খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। একজন বহিরাগতের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ফাঁস হয়ে যাওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এক বিশাল নিরাপত্তা ব্যর্থতা বলে মনে করা হচ্ছে।

গোপনীয় তথ্য নিরাপদ সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তে ব্যক্তিগত চ্যাট অ্যাপে শেয়ার করায় গোয়েন্দা আইন লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মার্কিন সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সেনেটর মার্ক ওয়ার্নার এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘এই প্রশাসন আমাদের দেশের সবচেয়ে গোপনীয় তথ্য নিয়ে খামখেয়ালি আচরণ করছে, যা সব আমেরিকানদের জন্য হুমকি।’ 

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ক্রিস ডেলুজিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটিকে এ নিয়ে জরুরি শুনানি আয়োজন করতে হবে।

তিনি বলেন—  ‘এটি একটি ভয়ঙ্কর জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন। এর জন্য দায়ীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’ 

কেবল ডেমোক্র্যাটরাই নন, রিপাবলিকান নেতারাও ক্ষুব্ধ। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ডন বেকন অ্যাক্সিওসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই ধরনের তথ্য কখনোই অনিরাপদ প্ল্যাটফর্মে পাঠানো উচিত নয়। রাশিয়া ও চীন নিশ্চিতভাবেই ওয়াল্টজের অনিরাপদ ফোন মনিটর করছে।’ 

কংগ্রেসের দুই কক্ষেই এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের নিজের দলের ওপর নির্ভর করছে।

হাউস স্পিকার মাইক জনসন এ বিষয়ে আপাতত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউস তাদের ভুল স্বীকার করেছে। এখন তারা নিশ্চয়ই বিষয়টি কঠোরভাবে দেখবে, এর বেশি আর কী বলার আছে?’ 

অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজে বলেছেন, দ্যা আটলান্টিকে প্রকাশিত এই ঘটনার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

ওয়াশিংটনে জোর গুঞ্জন উঠেছে, এই ঘটনার জেরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজকে পদত্যাগ করতে হতে পারে। কারণ তার ভুলেই সাংবাদিক গোল্ডবার্গ চ্যাটে যুক্ত হয়েছিলেন।

‘সিগনাল’ চ্যাটের আলোচনার সবচেয়ে আলোচিত অংশগুলোর একটি ছিল উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্সের ভিন্নমত।

সাংবাদিক গোল্ডবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যান্স চ্যাটে লিখেছিলেন ইয়েমেনে সামরিক হামলা করা ‘ভুল সিদ্ধান্ত’।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘হুথিরা ইউরোপীয় শিপিংয়ের জন্য বড় হুমকি হলেও, আমেরিকার বাণিজ্যের জন্য তেমন কোনো ঝুঁকি তৈরি করছে না।’

ভ্যান্স আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই যে, প্রেসিডেন্ট জানেন কি না যে এটি তার ইউরোপ সংক্রান্ত বার্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর ফলে তেলের দামও বাড়তে পারে।’

তবে তিনি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানান এবং লেখেন, ‘আমি আমার মতামত ব্যক্ত করলাম, তবে সিদ্ধান্ত যাই হোক, আমি তা সমর্থন করব।’

এটিই প্রথমবার নয়, যখন মার্কিন প্রশাসনের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এর আগেও ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়ই পদত্যাগের পর গোপন নথি রাখার অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়েন।

২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার ব্যবহারের ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সে সময় ট্রাম্প নিজেই ক্লিনটনকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘আমরা এমন একজনকে ওভাল অফিসে রাখতে পারি না, যে গোপন তথ্যের গুরুত্ব বোঝে না।’

গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) বিকেলে হিলারি ক্লিনটন নিজেও সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের চ্যাট ফাঁস নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেন, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

এসআই

Wordbridge School
Link copied!