ঢাকা : মানদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে ফুসফুস। তবে করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফুসফুস। এ সময় ফুসফুসের যত্ন নেয়া সবচেয়ে জরুরি। শ্বাসনালির মাধ্যমে গলা থেকে এই ভাইরাস ফুসফুসে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে। ফলে দেখা দেয় মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি ও ক্লান্তিবোধ।
তবে কিছু খাবার রয়েছে, যা ফুসফুসের জন্য ভালো। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ওই সব খাবার রাখলে ফুসফুস সুস্থ থাকবে।
আসুন জেনে নিই যা খেলে ভালো থাকে ফুসফুস-
আপেল: গবেষকরা ভালো ফুসফুস কার্যক্রমের সঙ্গে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও বিটা-ক্যারোটিন গ্রহণের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। এসবের সবকয়টি আপেলে রয়েছে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা ফুসফুসকে সুস্থ রাখে।
গাজর: গাজর বেটাক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্টের জন্য প্রসিদ্ধ। গবেষণায় বলা হয়, বেটাক্যারোটিন শরীরে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। ফুসফুস ভালো রাখতে গাজর একটি চমৎকার খাবার।
আখরোট: আখরোট হচ্ছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। একমুঠো আখরোট বাদাম অ্যাজমা ও অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যায় লড়ে যেতে সহায়ক হতে পারে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহনাশক পুষ্টি বলে প্রদাহজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
বেরি: ফুসফুসগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য ব্লুবেরি হচ্ছে অন্যতম সর্বাধিক কার্যকর বেরি। এটি হচ্ছে ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস, যা কোষ ধ্বংসাত্মক ফ্রি রেডিক্যালস থেকে রক্ষা করতে পারে।
ব্রোকলি: ব্রোকলিতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড, ফোলেট ও ফাইটোকেমিক্যাল পাওয়া যায়- এসবকিছু ফুসফুসকে ধ্বংসাত্মক উপাদান থেকে রক্ষা করে। ব্রোকলিতে এল-সালফোরাফ্যান নামক সক্রিয় উপাদান রয়েছে, যা কোষকে প্রদাহনাশক জিন সক্রিয় করতে কৌশল খাটায়- এভাবে শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।
পানি: শরীর বিষমুক্তকরণের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পানি পান করা। শুষ্ক ফুসফুসে অস্বস্তি ও প্রদাহ বেশি হয়। শারীরিক পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিদিন ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করুন।
কফি: কফিতে থাকা ক্যাফেইন ফুসফুসের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে তা খেতে হবে পরিমিত। কফি কিন্তু প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। এতে প্রচুর পলিফেনলস থাকার কারণে ফুসফুসকে ভালো রাখে। তাই নিয়মিত কফি পান করুন। এটি আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
লবণ: লবণও কিন্তু হাঁপানির উপসর্গকে কমিয়ে দিতে পারে। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় লবণ যোগ করুন খাবারে।
ঝালমরিচ: ঝালমরিচের ক্যাপসাইসিন শ্লেষ্মা নিঃসরণে উদ্দীপ্ত করে এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিকে সুরক্ষা দেয়। ঝালমরিচের চা পান করতে পারলে সবচেয়ে ভালো, এটাও বিটা-ক্যারোটিনের আরেকটি ভালো উৎস। বিটা-ক্যারোটিন অ্যাজমার অনেক উপসর্গ প্রশমিত করতে পারে।
আদা: আদা কেবলই প্রদাহনাশক নয়, এটি বিষমুক্তকরণে সহায়তা করে এবং ফুসফুস থেকে দূষণকারী পদার্থ দূর করে। আদা শ্বাসতন্ত্রের বদ্ধতা দূর করে, বায়ুপথগুলোকে খুলে দেয় ও ফুসফুসে সঞ্চালন বৃদ্ধি করে- এভাবে ফুসফুস অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়।
রসুন: রসুনে উপস্থিত ফ্লেভোনয়েড গ্লুটাথিয়োন উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে, যা বিষাক্ত পদার্থ ও কার্সিনোজেন দূর করে। এর ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সবুজ শাক-সবজি: এগুলো খাওয়ার অনেকগুলো উপকারিতার মধ্যে একটি হলো, আমাদের ফুসফুস ভালো রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। সবুজ শাক-সবজি খেলে তা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকেও দূরে রাখে। প্রতিদিনের খাবারে এসব শাক-সবজি রাখা আবশ্যক। মেথি শাক, পালং শাক, ব্রকোলি, বরবটি, শিম, মটরশুঁটি এসব শাক-সবজি নিয়মিত খাবেন।
লাল রঙের সবজি: নানা রঙের সবজি কিনতে পাবেন বাজারে। তার ভেতরে টুকটুকে লাল রঙের সবজিও কম নয়। যেমন ধরুন- পাকা মরিচ, লাল ক্যাপসিকাম এবং টমেটো হলো লাইকোপেন সমৃদ্ধ। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফুসফুসের সমস্যা সারাতে বেশ কার্যকরী। সেইসঙ্গে শরীরে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতেও কাজ করে এসব সবজি। যারা ক্রনিক রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে লাল রঙের সবজি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :