ঢাকা : উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা ভীষণ জরুরি। তবে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির কারণে সঞ্চয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। কিছুতেই ব্যয়কে বাগে আনতে পারছেন না।
সংসারের একটি খাতে খরচ কমালেও অন্য খাতে আবার বেড়ে যাচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস ইত্যাদির বিল, বাজার খরচ সবকিছুই। তবে দুর্দিনের কথা মাথায় রেখে সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে নতুন বছর। নতুন বছরে নতুন প্রত্যয়ে শুরু হবে জীবন। তাই এই বছর থেকেই শুরু করুন দৈনন্দিন খরচে লাগাম টানা। আর সে জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা করে চলা।
চলুন জেনে নিই নতুন বছরে সংসারের খরচ কমানোর কয়েকটি উপায়...
কোন খাতে খরচ বেশি হচ্ছে, লক্ষ রাখুন : খাওয়া-দাওয়া, বাড়িভাড়া, বিদ্যুতের বিলের মতো কিছু খরচ সব নির্দিষ্ট থাকে। তবে অনলাইনের যুগে অনলাইন শপিংয়ের পেছনে অনেক টাকা খরচ করে ফেলি আমরা। কোন কিছু প্রয়োজন না থাকলেও শখ বা ঝোঁকের বশে কিনে ফেলা হয়। খেয়াল রাখুন, কোথায় বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় কোন কিছুতে নয় তো? তাই খরচের একটি তালিকা করুন এবং খেয়াল করে দেখুন, সবচেয়ে বেশি কোন খাতে আপনি টাকা খরচ করছেন। লক্ষ্য করুন কোনটা বেশি প্রয়োজনীয়, কোনটা না হলেও চলবে।
বাইরে খাওয়া বাদ : আপনি হয়তো প্রায়শই বাইরে রেস্টুরেন্টে খেতে যান। কিন্তু, এটা বাদ দিতে পারেন। বাসায় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরীজীবি হলে সাধারনত বাসায় রান্না খুব কম হয়। ছুটির দিন ছাড়া কমপক্ষে ২ দিন বাহিরের খাওয়া বাদ দিয়ে হোমমেড লাঞ্চ করুন। এ ছাড়া বিকেল ও সন্ধ্যার খাবারও বাসায় করার চেস্টা করুন। আপনি যদি সত্যিই ব্যয় কমাতে চান তাহলে এই অভ্যাসটি খুবই জরুরি।
ব্র্যান্ডিং প্রবণতা ত্যাগ করুন : বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে অযথা ব্র্যান্ডিং প্রবণতায় ভুগবেন না। আপনাকে ভালো মানায় এমন পোশাক বা এক্সেসরিজ ব্যবহার করুন। এভাবেও কিন্তু আপনি ট্রেন্ডি হয়ে উঠতে পারেন। অযথা দাম দিয়ে ব্র্যান্ড এর পোশাক সব সময় পরার চেয়ে কিছু ব্র্যান্ডেড পোশাক কিনে রাখুন বিশেষ উপলক্ষে পরার জন্যে। এতে আপনার অর্থ ও স্ট্যাটাস দুটোই রক্ষা পাবে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করুন : বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী সামগ্রী ব্যবহার করুন। বিনা প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ঘরে লাইট চালানোর প্রয়োজন নেই। রাত জেগে টেলিভিশন দেখা বা মুঠোফোন চালানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। দিনে আলো জ্বালিয়ে রাখা, প্রয়োজন ছাড়া এসি বা ফ্যান চালিয়ে রাখার অভ্যাস বাদ দিন। চেষ্টা করুন বিদ্যুৎ বিলের লাগাম টেনে ধরতে। রান্নাঘরের কাজ শেষ হলে সব সময় চুলা বন্ধ করে রাখুন। এছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি ও অপচয় করবেন না।
মাসের বাজেট ঠিক করুন : মাসের শুরুতেই বাজেট অনুযায়ী টাকা আলাদা করে ফেলুন। চেষ্টা করুন এই টাকার মধ্যেই মাসের সব খরচ করার। এক খাতে টাকা কম পড়লে অন্য খাতে খরচ কমিয়ে আনুন।
প্রতিদিন কিছু সঞ্চয় করুন : প্রতিদিনই চেষ্টা করুন কিছু না কিছু টাকা জমাতে। হতে পারে সেটা ১০-১০০ টাকা। যাই হোক না কেন জমান। এবং সেটার কথা ভুলে যান। ভুলেও সেটায় হাত দেবেন না।
বিনোদন ও সামাজিকতা : বিনোদনের জন্য এমন আনন্দময় কাজ করুন, যাতে খরচ কম। বন্ধুরা মিলে বই পড়ার অভ্যাস করতে পারেন। এতে ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতাও কমবে। এক বন্ধুর বই দশজন পড়তে পারবেন। উৎসব-আয়োজনে কাউকে উপহার দিতে হলে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারেন কিংবা অন্যদের সঙ্গে মিলে উপহার কিনতে পারেন।
ছাড়ের সময় পণ্য কিনুন : অলংকার বা অন্যান্য পণ্যের দামে বছরের বিশেষ কিছু সময়ে ছাড় দেয়া হয়। চেষ্টা করুন সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে পণ্যটি কেনার। এতে আপনার বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাবে। খরচ কমানো খুব কঠিন কিছু নয়। আপনার একটু সদিচ্ছা আর সতর্কতাই যথেষ্ট!
এমটিআই