ঢাকা : ক্লান্ত থাকুন কিংবা ত্বক শুষ্ক হয়ে আছে, এক্ষেত্রে নিরাময় হিসাবে আরও পানি পান করতে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এটি কতটা সঠিক পরামর্শ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কেউ যদি সবসময় নিজের সাথে পুনঃব্যবহারযোগ্য পানির বোতল বহন করেন তাহলে অভ্যাসবশত দেখা যায় তিনি তার শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করছেন।
এছাড়া পানি পান নিয়েও মানুষের মধ্যে নানা ধরনের তথ্য রয়েছে। যেমন: প্রতিদিন বেশি বেশি পান করা সুস্বাস্থ্য, শক্তি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার গোপন রহস্য, বেশি বেশি পানি খেলে ওজন কমবে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
১৯৪৫ সালে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের ইউএস ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ক্যালোরি খাবারের জন্য এক মিলিলিটার তরল খাওয়ার পরামর্শ দেয়। অর্থাৎ কেউ যদি দৈনিক ২০০০-ক্যালরি ডায়েট করে তাহলে দুই হাজার মিলিলিটার অর্থাৎ দুই লিটার পানি খেতে হবে।
তবে এই পানির মধ্যে অন্যান্য পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকে – সেইসাথে যেসব ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পানি থাকে সেগুলোও যোগ হবে।
দিনে কত পানি পান করা উচিত?
প্রতিদিন আট গ্লাস বা প্রায় দুই লিটার পানি পান করলে আমাদের শরীর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আর্দ্র থাকে, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে।
এর পরিবর্তে, আপনার প্রতিদিন দেড় লিটার থেকে এক লিটার আটশ মিলিলিটার পানি পান করা উচিত। অর্থাৎ ছয় গ্লাস থেকে সাত গ্লাস কিংবা তার সামান্য কিছু বেশি। তবে এই পানি গ্রহণের পরিমাণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হবে।
যারা গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে এবং উঁচু কোথাও বাস করেন, সেইসাথে ক্রীড়াবিদ এবং গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের অন্যদের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হবে, বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৭৪ সালে, পুষ্টিবিদ মার্গারেট ম্যাকউইলিয়ামস এবং ফ্রেডেরিক স্টেয়ারের মতে, প্রাপ্তবয়স্করা দিনে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করে। তবে, এর মধ্যে ফল এবং সবজিতে থাকা পানি, ক্যাফিনযুক্ত এবং কোমল পানীয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বেশি পানি পানে কি ওজন কমে?
আমাদের শরীর যতোটা পানি পানের সংকেত দেয়, তার চেয়ে বেশি পানি পান করলে পানিশূন্যতা এড়ানোর বাইরেও অনেক সুবিধা হবে,এই তথ্যের আসলে কোনো প্রমাণ নেই। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি কোনো অবস্থাতে শরীরকে পানিশূন্য হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, পানিশূন্যতা এড়াতে যথেষ্ট পানীয় খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক থাকে।
২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সঠিকভাবে আর্দ্র থাকলে বার্ধক্যের ছাপও দেরিতে পড়ে। হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগ এড়ানো যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ভার্জিনিয়ায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বেলার খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ৫০০ মিলিলিটার বা দুই গ্লাসের মতো পানি পান করলে ওজন কমে।
আপনার কতটা পানি প্রয়োজন?
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যার ক্রমাগত আর্দ্র থাকতে যেখানেই যান, সাথে করে পানি নিয়ে যান এবং তাদের শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পান করেন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের প্রাকৃতিক তৃষ্ণার প্রক্রিয়া কম সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং আমরা অল্পবয়সী লোকদের তুলনায় বেশি পানিশূন্য প্রবণ হয়ে পড়ি বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া যারা বাস, মেট্রো বা গাড়িতে ১৫/২০ মিনিটের যাত্রার জন্য ৫০০ মিলিলিটার পানি বহন করেন তাদের ওইটুকু যাত্রায় এতোটা পানির প্রয়োজন নেই। এমনকি ঘামলেও না।
এক্ষেত্রে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ দিনে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন, যার মধ্যে চা এবং কফি, দুধ এবং চিনি-মুক্ত পানীয় অন্তর্ভুক্ত হবে।
আবার এটি মনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের তৃষ্ণার অনুভূতি ৬০ বছর বয়সের পর তেমন একটা সংবেদনশীল থাকে না।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ একটি বিষয়ে সম্মত হয়েছেন যে কার কতোটা তরল প্রয়োজনীয় সেটা একজন ব্যক্তির বয়স, শরীরের গড়ন, লিঙ্গ, পরিবেশ এবং শারীরিক কার্যকলাপের স্তরের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
২০২২ সালে, অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন যে মানুষের প্রতিদিন দেড় লিটার থেকে এক লিটার আটশ মিলিলিটার পানির প্রয়োজন। প্রস্তাবিত দুই লিটার বা আট গ্লাস নয়।
মানুষকে আর্দ্র রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ ঠিক করতে ২৩টি বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সাথে সমন্বয় করে তারা এই পানির পরিমাপের বিষয়টি দাঁড় করিয়েছেন।
তবে প্রতিদিন হিসাব নিকাশ ছাড়া যে পরিমাণ পানি আমরা পান করি তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করার একমাত্র স্বাস্থ্য উপকারিতা হল এর ফলে আপনাকে বার বার টয়লেটে যেতে হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু না। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমটিআই