ঢাকা : ওজন কমাতে ব্যয়ামের পাশাপাশি মানতে হয় সঠিক খাদ্যাভ্যাস। এদিকে ওজন বাড়তে শুরু করলে প্রথমে পেটে মেদ বৃদ্ধি পায়। পেটের চর্বি জমলে তা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ব্যায়াম আর খাদ্যতালিকার দিকে নজর দেন। অনেকে আবার কঠিন ডায়েটে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে মজার ব্যপার হলো এমন অনেক শাক-সবজি আছে যা আমদের পেটের মেদ বা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম আর ডায়েটের সঙ্গে এসব সবজি খেলে সহজেই বাড়তি মেদ থেকে মুক্তি মিলবে।
পেটের মেদ ঝরাতে উপকারী ৮টি শাকসবজি সম্পর্কে জানুন...
পালংশাক : পালংশাক নানা রকম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। পেটের মেদ কমাতে প্রতিদিনের খাবারে পালংশাক যোগ করলে উপকার মেলে। পালংশাকে ক্যালরি কম, আঁশ বেশি। তাই পালংশাক খেলে পেট বেশি সময় ধরে ভরা থাকে। ‘অ্যাপেটাইট’ নামের একটি জার্নালের গবেষণা অনুযায়ী, পালংশাকে থাকা থাইলাকয়েড নামের উপাদান ক্ষুধা ও খাওয়ার ইচ্ছা ৯৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এই শাক রান্না করে ভাত দিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি সালাদ, স্মুদি ইত্যাদি বানিয়েও খাওয়া যায়। পালংশাকের ম্যাগনেশিয়াম রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
লাউ : লাউয়ে ক্যালরির পরিমাণ কম, পানির পরিমাণ বেশি। এ কারণে লাউ ওজন নিয়ন্ত্রণে আদর্শ খাবার। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, লাউয়ে থাকা উচ্চমাত্রার পানি ও আঁশজাতীয় পদার্থ দ্রুত পেট ভরিয়ে ফেলে এবং ক্যালরি গ্রহণের ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের তরকারি রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি লাউ দিয়ে জুস বানিয়েও খাওয়া যায়।
কুমড়া : অনেকেই হয়তো কুমড়া খেতে মোটেই পছন্দ করে না। অথচ এই সবজি খেলে খুব কম সময়ে পেটের মেদ কমবে। কারণ কুমড়ায় ক্যালোরি কম ও ফাইবারের পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে সবুজ কুমড়ায়।এছাড়া আছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন কে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ফাইবার বেশি থাকার কারণে কুমড়া খেলে হজমশক্তি ভালো হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হবে।
ফুলকপি : ওজন কমাতে সহায়ক আরেকটি সবজি হলো ফুলকপি। ফুলকপিতে ক্যালরি কম, আঁশ বেশি। তাই ফুলকপি খেলে দ্রুত পেট ভরে যায়। ফুলকপিতে আছে ইনডোলের মতো বেশ কয়েকটি যৌগ। এসব যৌগ হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেটের মেদ কমায়। ভাতের বিকল্প হিসেবেও ফুলকপি খাওয়া চলে।
গাজর : গাজর শুধু চোখের জন্যই ভালো নয়, পেটের চর্বি কমাতেও সহায়ক। গাজরে ক্যালরির পরিমাণ কম, আঁশের পরিমাণ বেশি। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। ‘নিউট্রিশন’ নামের জার্নালের গবেষণা থেকে জানা যায়, গাজর বেশি খেলে পেট ভরা থাকে এবং ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমে।
করলা : তেতো স্বাদের কারণে করলা সবার পছন্দ না-ও হতে পারে। কিন্তু এই সবজির উপকারিতাগুলো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। করলায় বিদ্যমান যৌগগুলো ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। করলা খেলে রক্তের শর্করা থাকে নিয়ন্ত্রণে এবং পেটের মেদ কমে। ‘বিএমসি কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অল্টারনেটিভ মেডিসিন’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, করলার নির্যাস ইঁদুরের পেটের মেদ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিয়েছে। রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি পেটের মেদ কমাতে করলার জুসও খাওয়া যেতে পারে।
শসা : শরীর ও ত্বক সতেজকারক একটি সবজি। এটি শরীরে পানির পরিমাণ বাড়ায়। পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শসা বেশ উপকারী। শসায় ক্যালরির পরিমাণ কম। এটি আপনার শরীর থেকে অনেক দূষিত উপাদান বের করে দিতে সক্ষম। ‘জার্নাল অব হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিকস’-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শসার মতো পানিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ওজন কমাতে সহায়ক। আমাদের দেশে সালাদ হিসেবে শসা খুবই জনপ্রিয়। ওজন কমানোর জন্য শুধু শসার টুকরা খাওয়াও বেশ উপকারী।
ব্রকলি : অনেক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি সবজি, যা পেটের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। ব্রকলি প্রচুর আঁশসমৃদ্ধ। এতে বিদ্যমান উপাদানসমূহ বাড়তি চর্বি ঝরাতে সহায়তা করে। ‘জার্নাল অব দ্য একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিকস’-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রকলি খেলে পেটের নিচে জমা ভিসেরাল ফ্যাট কমে যায়। ব্রকলি ভেজে, সালাদ, স্যুপ ইত্যাদিতে খেলে সুফল মেলে।
ইউআর/এমটিআই