Menu
ঢাকা : রাজধানীর শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশন থেকে শুক্রবার বিকেলে ট্রেনে উঠতেই দেখা গেল তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আসতেই যাত্রীরা প্রায় সবাই মিছিলের মত নেমে গেলেন। তাদের গন্তব্য অমর একুশে বইমেলা।
মেলার প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে চোখ যেতেই দেখা গেল, পহেলা ফাগুন আর ভ্যালেন্টাইনস ডের জোড়া উৎসবের দিনে বইমেলা যেন জনারণ্য।
অনেকেই এসেছেন বাসন্তি সাজে। আড্ডা, গল্প আর ছবি তোলার পাশাপাশি পছন্দের বই কিনছেন কেউ কেউ। কোনো কোনো যুগলকে দেখা গেল হাত ধরে হাঁটতে। তবে মেলা ৯টার পরিবর্তে সাড়ে ৭টায় বন্ধ হওয়ার কারণে আক্ষেপও ছিল অনেকের।
মেলা পরিচালনা কমিটি আগের দিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েই জানিয়েছিল, শবে বরাত উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা রাত ৯টার পরিবর্তে বন্ধ হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এই তথ্য জানা ছিল না বইমেলায় আসা কোনো কোনো দর্শনার্থীর।
মগবাজার থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে শিহাব সরকার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় আসেন বইমেলায়। এসে দেখেন মেলায় আর কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ সদস্যদের অনুরোধ করার পরও ঢুকতে দেয়া হয়নি তাদের।
শিহাব বলেন, বিকেলেই মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছি। সন্ধ্যায় বইমেলায় এসে তো আর ভেতরে ঢুকতেই পারলাম না।
সিসিমপুরের পরিবর্তে শিশুদের জন্য ভিন্ন আয়োজন : শুক্রবার সকাল ১১টায় শুরু হয় বইমেলা, চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পর্যন্ত। এদিন সকালে শিশুদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিল বইমেলা। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
এদিন সকালে অনেক শিশুই অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় ভিড় করেছিল সিসিমপুর দেখার আশায়, বিকল্প হিসেবে শিশুরা পেল প্লে সেন্টার ‘শৈশবের’ পাপেট শো বা ‘গল্প পাঠের আসর’।
গল্প পাঠের আসরটি শুরু হয়েছে এই শুক্রবার থেকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলবে আয়োজনটি। তবে সরকারি ছুটি থাকায় এই শনিবার আয়োজনটি বন্ধ রাখা হবে বলে জানা সংশ্লিষ্টরা।
মেলায় শিশুদের জন্য পাজল মেলানো, রঙ মেলানো, ছবি আঁকা আর বাস্কেট বল খেলার আয়োজন করেছে ‘কিডস জোন’। এটি চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
কিডজ জোনের কো-অর্ডিনেটর আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও এসেছি আমরা। এখানে অংশ নিতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এদিন সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন- আবৃত্তিশিল্পী নাসিম আহমেদ, অনন্যা লাবণী পুতুল ও অধ্যাপক তারিক মনজুর।
ভিড় বাড়ে দুপুরের পর : দুপুরের পর থেকে নানা বয়সীদের আগমনে বইমেলা রূপ নেই জনসমুদ্রে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মত্ত থাকতেও দেখা যায় অনেককে।
এক দশক পর বইমেলায় এসেছেন রফিকুল নামে একজন। তিনি বলেন, আমি ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে অস্ট্রেলিয়া যায়। ১০ বছর পর দেশে এসেছি। প্রিয় ক্যাম্পাসেও ঘুরেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাস লাইফের মতোই বইমেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।
অন্যপ্রকাশ, প্রথমা, বাতিঘর, কথা প্রকাশসহ কয়েকটি স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে, তারা জানান এদিন বিক্রিও ছিল সন্তোষজনক।
নতুন বই : বইমেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার মেলায় নতুন বই এসেছে ২৫০টি।
অন্যপ্রকাশ এনেছে মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’। নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি লেখকের নির্বাচিত গল্পের এক সংকলন। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ।
মোস্তফা মামুনের ভাষ্য, গল্পের সন্ধান আর গল্প শোনানোর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই।” মোস্তফা মামুন সেই আনন্দকেই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছেন।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে তাপস রায়ের ‘রসিক শরৎচন্দ্র’।
তাপস রায় বলেন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যখ্যাতি যেমন গগনচুম্বী, রহস্যে ঘেরা ব্যক্তিজীবন তেমনই অতলস্পর্শী। বইটিতে পাঠক খেয়ালি, আত্মভোলা, আত্মপ্রচার বিমুখ, অভিমানী, দরদী, পরোপকারী, বন্ধুবৎসল, দেশপ্রেমিক, রাজনীতি সচেতন শরৎচন্দ্রকে পাবেন।
আলোচনা, আবৃত্তি ও গান : এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আসাদ কাজল।
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘আহমদ ছফার আগ্রহী যুবকেরা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তাহমিদাল জামি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নূরুল আনোয়ার এবং সাজ্জাদ শরিফ। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সলিমুল্লাহ খান।
সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন জাহাঙ্গীর ফিরোজ, চঞ্চল আশরাফ, আসাদ কাজল, হিজল জোবায়ের, তাসনোভা তুশিন, সুনৃত সুজন, নাজমা আহমেদ এবং মো. শফিক-উল-ইসলাম।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফেরদৌসী বেগম, ইশিতা জাহান অর্ণা, শিমুল পারভীন এবং আবীর বাঙালি।
শনিবারও মেলার সূচিতে পরিবর্তন : শনিবার বইমেলার ১৫তম দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাজনিত কারণে বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টার পরিবর্তে দুপুর ২টায় এবং চলবে রাত ৯টায় পর্যন্ত। এই দিন মেলায় থাকবে না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর।
বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম: সৈয়দ আলী আহসান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি মুহম্মদ আবদুল বাতেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন তারেক রেজা এবং মহিবুর রহিম। সভাপতিত্ব করবেন আবদুল হাই শিকদার।
এমটিআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT