Menu
ঢাকা: সন্জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
বেলা আড়াইটায় সন্জীদা খাতুনের কফিন শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। অশ্রু, গান, কবিতা ও ফুলে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এ সময় ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেছেন শিল্পীরা। তাকে শেষবারের মতো দেখতে হাজির হয়েছিলেন অনেকে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সন্জীদা খাতুন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ ছুঁই ছুঁই।
শহীদ মিনারে সন্জীদা খাতুনের পুত্রবধূ ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘তিনি আজকে বিদায় নিচ্ছেন। কিন্তু তার দেখানো পথ ও তার শক্তি যেন ধারণ করতে পারি। এগিয়ে যেতে পারি। যারা সমবেত হয়েছেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
বক্তব্য শেষে ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গেয়ে শোনান লিসা। গানটি গাইতে গিয়ে গলা ধরে আসে তার।
সন্জীদা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগীতশিল্পী লুভা নাহিদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাজার হাজার ছেলেমেয়ের মাঝে শিক্ষার আলোটা ছড়িয়ে গেছেন তিনি। এটা অনেক বড় পাওয়া।’
ছায়ানটে ‘মিনু আপা’ বলে পরিচিতি রয়েছে সন্জীদা খাতুনের। প্রিয় মিনু আপাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, খুলনা থেকে ঢাকায় আসার পর থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। সন্জীদা খাতুনের হাত ধরে ১৯৭৬ সালে রমনার অশ্বত্থতলায় নববর্ষ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
তরুণ বয়স থেকেই সন্জীদা খাতুন যুক্ত হয়েছেন আন্দোলন-সংগ্রামে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ছিল অগ্রগণ্য ভূমিকা। ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে সবাই চেনেন। এ ছাড়া শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু এড়িয়ে সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবেও তার অবদান অসামান্য।
ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘তিনি বটবৃক্ষ ছিলেন, আমাদের ছায়া দিতেন। সেই ছায়াটা সরে গেল। ১৯৭১ সালে উনাকে কলকাতায় ধর্মতলা স্ট্রিটে দেখেছি। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার প্রধান সংগঠকদের একজন ছিলেন তিনি।’
সবশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে ইতি টানা হয়েছে।
এদিন সন্জীদা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, প্রথম আলো, উদীচী, বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থা, কণ্ঠশীলনসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন।
সন্জীদা খাতুনকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, অভিনেতা-নির্দেশক তারিক আনাম খান, নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, অভিনেতা ঝুনা চৌধুরী, অভিনেত্রী আফসানা মিমি, সংগীতশিল্পী ফারহিন খান জয়িতাসহ অনেকে।
এর আগে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সন্জীদা খাতুনকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শহীদ মিনার থেকে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এরপরের কার্যক্রম নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পরিবার।
এআর
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT