বাম্পার ফলনে অধিক মুনাফার স্বপ্ন বুনছেন গাজীপুরের কাঁঠাল চাষীরা 

  • এম.এস. রুকন, গাজীপুর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৪, ০১:১৯ পিএম
বাম্পার ফলনে অধিক মুনাফার স্বপ্ন বুনছেন গাজীপুরের কাঁঠাল চাষীরা 

ছবি : প্রতিনিধি

গাজীপুর: সারা দেশ জুড়েই প্রচলিত একটি নাম শিল্প সমৃদ্ধে ভরপুর গাজীপুর। তবে শিল্পের পাশাপাশি গাজীপুরে কৃষি পণ্য উৎপাদনেও যে সেরা এটা অনেকেই হয়তো জানেন না।সারা দেশের মধ্যে যে কয়েকটি অঞ্চলে আমাদের জাতীয় ফল গরীবের পুষ্টি, কাঁঠালের উৎপাদন ও বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ হয় তার মধ্যে সেরা অঞ্চল গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। 

এবছর চলতি অর্থবছরে জেলার বিখ্যাত ৪ উপজেলা গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈরে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর কিছু দিন পরই সোনালী সম্পদ কাঁঠাল পাঁকতে শুরু করবে। বাজারে এবার কাঁঠালের দাম ভাল যাবে বলে অধিক মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন বুনছেন এ অঞ্চলের চাষীরা। 

উপজেলার কাঁঠাল চাষীরা সোনালি নিউজকে জানিয়েছেন, এবার স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রথম সারা দেশের মতো গাজীপুরেও গত এপ্রিলে তীব্র তাপদাহ বয়ে যায়। এ সময়ে মনে হয়েছিল এবার আর কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এ সময়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে অধিকতর গাছের যত্ন নেওয়ায় বৈরী আবহওয়া থেকে রক্ষার পাশাপাশি গাছের ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন কাঁঠাল চাষীরা। 

জেলার সব চেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয় শ্রীপুরে। এজন্য দেশের মানুষের কাছে কাঁঠালের রাজধানী নামে পরিচিত এ অঞ্চলটি।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি গ্রামে কাঁঠাল গাছ জুড়ে শোভা পাচ্ছে মৌসুমী ফল কাঁঠাল।গত বছরের মতো এ বছরও প্রতিটি গাছে প্রচুর কাঠাল ধরেছে। বসতবাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে ফসলী জমির দুধারসহ বিভিন্ন জমিতে জাতীয় ফল কাঁঠালের নয়নাভিরাম দৃশ্য। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে মগডাল পর্যন্ত থোকা থোকা ঝুলে আছে কাঁঠাল। আর কিছু দিন পরই বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা কাঁঠাল ক্রয়ের জন্য কৃষক ও চাষীদের সঙ্গে বায়না করবেন। 

এমসি বাজার এলাকার কাঁঠাল চাষী মাহফুজুর রহমান বলেন, এবার তীব্র তাপদাহের কারনে অসংখ্য কাঁঠালের মুচি গাছে থেকে ঝড়ে পড়ে গেলেও ফলন ভালো হয়েছে। বড় গাছে ১০০-২০০টি এবং ছোট গাছে ৭০-১০০টি করে কাঁঠাল ধরেছে। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনগুলোতে যদি আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি না হয় তাহলে ৪০-৫০ দিনের মধ্যে তার গাছের কাঠাল বাজারে উঠাতে পারবেন।  

শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের সুজন মিয়া গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ১৫টি কাঁঠাল গাছে সমানতালে কাঁঠাল ধরেছে। এবার আবহাওয়ার বৈরী থাকলেও আল্লাহর রহমতে ভালোই ফলন এসেছে। গত বছরের মতো এবারও তিনি ৩ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, কাঁঠাল শ্রীপুর বাসীর জন্য আর্শীবাদ। অনেকেই বছরে কয়েক লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেই স্বাবলম্বী।

এলাকার কৃষক এনামুল বলেন, আমরা এবার হতাশ হয়ে পড়ি। তীব্র তাপদাহে কাঁঠালের মুচি ঝরে পড়ায়। তবে আল্লাহর রহমতে এবারও ফলন ভালো হয়েছে। আশাকরি আাগামী মাসের মধ্যেই বাজারে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, আকৃতিভেদে প্রতিটি কাঁঠাল খুচরা ও পাইকারি মূল্য আনুমানিক ৫০ থেকে ১৫০ টাকা হয়।মৌসুমী ফল কাঁঠাল সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠু বাজারজাত করণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকলে কাঁঠাল চাষীরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। 

পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁঠালে আছে প্রচুর ভিটামিন। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পুষ্টিমান হিসেবে মোট কার্বোহাইড্রেট ২৪ গ্রাম, বায়াটারি ফাইবার ২ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ভিটামিন এ ২১৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০৩ মিলিগ্রাম এবং ক্যালরি পাওয়া যায় ৯৪ মিলিগ্রাম। এজন্য কাঁঠালকে এখনো গ্রামের মানুষের কাছে পুষ্টি ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়। 

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা জানান, উপজেলায় ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৯৭৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষাবাদ করা হয়েছে। গত বছর আমাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিলো ৬২ হাজার ৭০ মেট্রিকটন। এবার আরও বেশি উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, তীব্র তাপদাহের মধ্যে গাছ থেকে মুচি ঝরে পড়লেও চাষীদের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে পরামর্শ প্রদান করায় ব্যাপক ক্ষতি হয়নি। ফলে ফলন ভালো হয়েছে। 

অপর দিকে গাজীপুরের কাঁঠাল চাষ, উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গাজীপুরের কাঁঠাল শুধু দেশ সেরাই নয়, এ শিল্পাঞ্চলের কাঁঠাল দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। এজন্য কাঁঠাল চাষ ও চাষীদের উন্নয়নে মডেল প্রকল্প চালু করতে হবে। 

এসআই/

Link copied!