উত্তাল সমুদ্র থেকে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা, বাজারে নেই ইলিশ

  • তাপস মাহমুদ, বরগুনা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
উত্তাল সমুদ্র থেকে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা, বাজারে নেই ইলিশ

বরগুনা: ইলিশের ভরা মৌসুমেও বৈরী আবহাওয়ায় সমুদ্র উত্তাল থাকায় খালি হাতে ঘাঁটে ফিরছেন উপকূলের জেলেরা। যার কারণে ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত ইলিশ শিকার করতে পারছেন না তারা। এতে করে চলতি মৌসুমে নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছে মৎস পেশায় জড়িতদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত টানা ১০ দিন মৌসুমী বায়ু ও নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় উপকূলের জেলেরা ঘাটে বসে অলস সময় পার করেছে। সোমবার শেষ বিকেল থেকে মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে উপকূলের হাজার হাজার মাছধরা ট্রলার গভীর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধানে যায়। এরপর গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে হঠাৎ দমকা বাতাসের সাথে বৃষ্টি শুরু হয়। তখনই মাঝিরা ঘাটের উদ্দেশ্য ট্রলার চালিয়ে অনেকে চলে আসেন। তবে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা জাল ফেললেও মাছ ধরা না পড়ায় উপকূল ফিরে এসেছে। ফলে গত সোমবার সকালে পাথরঘাটা বিএফডিসি বাজার ছিল ইলিশ শূন্য। সামান্য কিছু সাগরের চিংড়ি ও অন্যান্য প্রজাতির মাছ দেখা গেলেও মেলেনি ইলিশের দেখা।

ফারুক নামের এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন রাজধানীতে ১০/১২ মণ ইলিশ পাঠাই, কিন্তু এখন দুই থেকে এক পেটির বেশি পাঠানোর সুযোগ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি পাথরঘাটা বিএফডিসিতে সচারাচর দেখা যায়না। 

জানা যায়, ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই সামুদ্রিক মাছ আহরনের উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর পরপরই দফায় দফায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ ইলিশের দেখা পায়নি মৎস্য বন্দরের জেলেরা। সব মিলিয়ে হতাশ উপকূলের হাজার হাজার জেলেরা। কেউ কেউ পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। আবার অনেকেই দাদন নিয়ে বাধ্য হয়ে এ পেশাই পড়ে আছেন। 

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গত চার বছরে আমরা ব্যবসার মুখ দেখিনি। লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে এভাবে চলতে থাকলে এ পেশা টিকিয়ে রাখার কোন সাধ্য নাই। ইতিমধ্যে এ পেশা ছেড়ে অনেকেই চট্টগ্রামে গিয়ে শ্রমিক হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। অনেকে স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে লোকাসানের টাকা পরিশোধ করছে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মহসিন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র বার বার আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে, ফলে গত কয়েক বছর ধরে গভীর সমুদ্রে লম্বা জালে কিছু মাছের দেখা পেলেও ভাসান জাল, কালো কট বা লাল জালের অধিকাংশ জেলেরা তেমন ইলিশ পায়নি। সমুদ্রের মোহনা খনন এবং সমুদ্রের ভিতরে ১২/১৪ কিলো যে পলি পড়ে গেছে সেটা খনন করতে হবে। সেই সাথে বিভিন্নভাবে সাগরে জাহাজ থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তাও বন্ধ করতে হবে। সাগর মোহনায় পলি ভরাট হওয়ায় জেলার তিনটি নদী বলেশ্বর, বুড়িশ্বর ও বিষখালী নদীতেও ইলিশ ঢুকতে না পারায় এখন আর তেমন ধরা পড়েছে না ইলিশ। 

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই নতুন মৎস্য প্রাণী উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি। জেলেদের এই রকম কার্যক্রম বেগবানে বৈজ্ঞানিক কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা অবহিত করেছি। সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন। আশা করছি অতি শীঘ্রই এটা বাস্তবায়ন হবে। 

এসএস

Link copied!