আকাশে বিদ্যুৎ চমকালেই থমকে যায় পাথরঘাটার বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা

  • মাহমুদুর রহমান রনি, পাথরঘাটা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৪, ০৩:০৬ পিএম
আকাশে বিদ্যুৎ চমকালেই থমকে যায় পাথরঘাটার বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা

ফাইল ছবি

বরগুনা: বরগুনার পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ চমকিয়ে একটু বৃষ্টি শুরু হলেই থেমে যায় বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা। এ যেন বৃষ্টির সাথে বিদ্যুতের লুকোচুরির গল্প। বিদ্যুতের তারে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করলে শুরু হয়ে যায় সমস্যা।  ফলে বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে রাত কাটাতে হয় পাথরঘাটার মানুষের।  এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের। 

বিদ্যুতের এই লুকোচুরি খেলায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় পাথরঘাটার ৫৬ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের। কোনরকম আবহাওয়া খারাপ হলেই দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হয় উপজেলাবাসীর।

আবহাওয়া খারাপের কারনে গেল সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত টানা ৫ দিন বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়েছে পাথরঘাটাবাসীদের। ৫ দিন বিদ্যুৎ না থাকায় পাথরঘাটার বরফকল, করাতকল, রাইসমিল, ওয়ার্কশপসহ যেমন সকল কলকারখানা বন্ধ হয়েছিল, তেমন এ-উপজেলার বাসিন্দাদের প্রত্যেকের ফ্রিজে রাখা মাছ, মাংসসহ তরকারি সব পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে উপজেলার সকল মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলো অচল হয়ে যায়, যার ফলে গ্রামীন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেলসহ সকল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গোটা পাথরঘাটাবাসী সকল ধরণের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস অবতরণ কেন্দ্র বরগুনা পাথরঘাটায় হাওয়ায় প্রচুর পরিমান বরফের চাহিদা রয়েছে, তাই বরফের প্রয়োজনে এখানে ২২ টি বরফকল, ট্রলারের যন্ত্রপাতি ঠিক ও মেরামত করার জন্য ছোট বড় প্রায় ৫০ টি ওয়ার্কশপ, ট্রলার ও ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনে ৮২টি করাতকলসহ বিভিন্ন কল কারখানার ঘরে উঠেছে। বিদ্যুৎ না থাকলে এসকল কল কারখানা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে পাথরঘাটার সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সময়ে ও বিক্ষোভ মিছিল মানববন্ধন করেছে। কিন্তু পায়নি তাদের সমস্যার সমাধান।

পাথরঘাটার ব্যবসায়ী ও পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব ইসমাইল শিকদার এসমে বলেন, বিদ্যুতের অনিয়মের শেষ নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আর কিছুক্ষণ পরপরই তারা ফেসবুকে পোস্ট দেয় মঠবাড়িয়া ৩৩ কেবি লাইনে সমস্যা। অফিসে বসে তারা নিজেদের ইচ্ছে মত বিল করে কোন গ্রাহকের বাড়ি না গিয়ে। আমরা এই পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি চাই। আমাদের দাবি পিডিপির আওতায় পাথরঘাটার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেয়া হোক।

পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাসুদ রানা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারনে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের যথাযথ সেবা দিতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। এছাড়া হাসপাতালের ফ্রিজে রাখা বিভিন্ন প্রকার ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাথরঘাটা উপজেলা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো.আবদুছ ছালাম বলেন, পাথরঘাটার বিদ্যুৎ লাইনটি দীর্ঘ ৬৭ কিলোমিটার দূরত্বের ভান্ডারিয়া থেকে হওয়ায়, ৬৭ কিলোমিটার পথের মধ্যে যেকোন স্থানে সমস্যা দেখা দিলেই গোটা পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে এবং আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবেন। পাথরঘাটাবাসীকে বিদ্যুতের চলমান সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে পাথরঘাটায় একটি বিদ্যুতের সাব গ্রীড স্টেশন স্থাপন করতে হবে।


এসএস

Link copied!