নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান চায় তিস্তাপাড়ের মানুষ

  • সজীব আলম, লালমনিরহাট | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম
নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান চায় তিস্তাপাড়ের মানুষ

লালমনিরহাট: গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বন্যার পর এখন অসময়ের নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাট জেলার তিস্তাপাড়ের কয়েকশত পরিবার। নদীতে পানি কমলেও তীব্র ভাঙনে ভিটেমাটি বিলীন হচ্ছে সদর ও আদিতমারী উপজেলার নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে। ভাঙনের কবলে পরে ঘড় ছাড়া হয়ে এখন অন্যত্র অবস্থান নিচ্ছে মানুষজন। 

তিস্তা নদীর বাম তীরে অবস্থিত লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা। ফলে বন্যা আর ভাঙনের শিকার হচ্ছেন জেলার পাঁচটি উপজেলার মানুষ। একেকটি পরিবার একাধিকবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সরিয়ে নিয়েছেন বসতভিটা। বাড়ি করার জায়গা না পেয়ে অনেকেই বাঁধ ও রাস্তার ধারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না করায় তিস্তা নদীর তলদেশ প্রচুর পলি ও বালু ভরাট হয়েছে। ফলে বর্ষাকালে সামান্য পানিতে তিস্তা নদীর পানি দুই কূল উপচে লোকালয়ে বন্যার সৃষ্টি করছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভেসে যায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পানিতে ডুবে ধান সহ বিভিন্ন ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পরেছে তিস্তাপাড়ের কৃষকরা। চাহিদা মতো চাষাবাদ না হওয়ায় বাজারেও বেড়েছে বিভিন্ন শাকসবজির দাম। একই সঙ্গে ঘনঘন বন্যায় তিস্তায় গড়ে উঠছে অসংখ্য বালু চর। ফলে অনাবাদি জমির পরিমাণও বাড়ছে দিনদিন।  

বিগত কয়েকদিনের ব্যবধানে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্প্যার বাঁধের ভাটিতে ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গ্রামের বাকি বাড়িগুলোও ভাঙন আতঙ্কে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরবাড়ি সরাতে পারলেও নতুন করে অবস্থান নেয়ার মতো জমির অভাবে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাঙন ঠেকাতে পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। স্থানীয়দের মতে অন্তত পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ দ্রুত ফেলতে না পারলে পুরো গ্রামটি বিলীন হয়ে যেতে পারে।

আদিতমারী উপজেলার গরিবুল্লাটারী গ্রামের গ্রামের রহিমা বেওয়া বলেন, আগে আমাদের গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরুর বিশাল সংসার ছিল। নদী ভাঙ্গনের কারণে গত সাতদিন আগে বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। জমি না পাওয়ায় ঘর রাস্তার পাশে ফেলে রেখে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছি। এর আগেও অন্তত ১৯ বার আমাদের বাড়িঘর সরাতে হয়েছে।  

একই গ্রামের ভ্যানচালক মোনতাজ আলী জানান, ‘গত সপ্তাহে দেখেছি নদী খানিকটা দূরে ছিল। দেখতে দেখতে এখন আমার প্রতিবেশীর বাড়ির উঠানে চলে এসেছে। তাদের বসতভিটা দিয়ে এখন নদী প্রবাহিত হচ্ছে।

সদর উপজেলার হরিণ চওড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, সারা বছর কষ্ট করে আয় করা অর্থ যা সঞ্চয় করি তা প্রতিবছর বন্যা আর নদী ভাঙনে নষ্ট হয়। এখন প্রতি বছরই ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। বন্যায় ডুবে জমির সব ফসল নষ্ট হচ্ছে। আমরা স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে চাই। এজন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। আমরা সহায়তা চাইনা তিস্তায় স্থায়ী বাঁধ চাই।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনডিসি এস এম শাফায়াত আখতার নুর জানান, প্রতি বছর নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকারিভাবে পরিবার প্রতি দুই বান ঢেউটিন ও নগদ কিছু টাকা বিতরণ করা হয়। তবে এ বছর গত বৃহস্পতিবার ৩০০ বান টিন ও নগদ নয় লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এসব অনুদান বিতরণে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, গরিবুল্লাটারী এলাকায় প্রায় ১৪০০ মিটারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা শুষ্ক মৌসুম ছাড়া ঠেকানো সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকা রক্ষায় ব্লোক দিয়ে বাঁধ করা হবে। আপাতত রক্ষা করতে ৫০০ জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। যতটুকু সম্ভব রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যা আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের একটি তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু অর্থ বরাদ্দ এসেছে। সেখান থেকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।  নদী ভাঙন একটি প্রকৃতিক দুর্যোগ। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলে স্থায়ীভাবে এটা সমাধান করা সম্ভব নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা বা বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই। আমরা এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। 

এসএস

Link copied!