পাবনা: পাবনার চাটমোহরে সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিচয়ে যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় হান্ডিয়াল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিন বাদি হয়ে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) চাটমোহর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের জানান উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে ১০টি করে কার্ড দেওয়া হবে। যার মধ্যে চাল, ডাল, চিনি ও নগদ ৪২০০ টাকাসহ মোট পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা ও মালামাল দেওয়া হবে।
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক একটি মোবাইল নাম্বার সবাইকে দিয়ে সেই নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে এক ব্যক্তি নিজেকে সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে যুবদলের ইউনিয়নের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের জানান আরও অনেক কার্ড আছে। প্রত্যেক কার্ডের বিপরীতে ৭৫০ টাকা করে দিলে নেতারা আরও কার্ড নিতে পারবেন।
এ সময় হান্ডিয়াল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলজার মাহমুদ গত রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে মোট ১১ হাজার ২৫ টাকা ওই ভুয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার নাম্বারে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাঠান। এছাড়া নিমাইচড়া ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা আরও ১৮ হাজার টাকা প্রদান করেন একই নাম্বারে। পরে তারা
পুনরায় যোগাযোগ করতে গিয়ে মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পান এবং জানতে পারেন ভুয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে হান্ডিয়াল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিন জানান, ‘উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন সমাজসেবা অফিসারের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। আমরা তার কথা মতোই এই মোবাইল নাম্বারে টাকা প্রদান করে প্রতারিত হয়েছি। আমরা এর বিচার চাই।’
ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম জানান, ‘সমাজসেবা অফিস থেকে ১০টি কার্ড প্রদানের বিষয়টি ফারুক ভাই জানায়। আমি সেই মোতাবেক নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করি। পরে আমাকে সমাজসেবা অফিসার পরিচয়ে মোবাইলে ৭৫০ টাকার বিষয়টি জানিয়েছিল। কিন্ত আমি কোন টাকা পাঠাইনি। এখন জানতে পারছি সব ভুয়া।’
এ ব্যাপারে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চাটমোহর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক তানভির জুয়েল লিখন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে সমাজসেবা অফিসের প্রদান করা কার্ডের কথা বলে তাদের তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলেছিলাম। পরে আমি জানতে পেরেছি এটি ভুয়া ঘটনা। তবে নেতাকর্মীরা আমাকে না জানিয়েই ওই ভুয়া সমাজসেবা অফিসারকে টাকা দিয়েছে। আমি বিষয়টি জানিয়ে চাটমোহর থানা পুলিশ কে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছি।’
চাটমোহর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক তানভির জুয়েল লিখন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার কাছে হঠাৎ করেই ওই প্রতারক ফোন করে নিজেকে চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকারি কার্ড ও টাকা, খাদ্য সামগ্রী দেবার কথা বলে। এজন্য আমার কাছে তালিকা চায়। পরে আমার কাছ থেকে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিবের নাম্বার নেন। আমি উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফারুক ভাইকে বিষয়টা জানাই এবং যোগাযোগ করতে বলি। পরে আমি বিষয়টা ভুলে গিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি সব প্রতারণা করছে।’
লিখন আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আজ আমরা ওই প্রতারকের মোবাইল নাম্বারে আবার কথা বলি। তিনি আমাদের জানান যে তার মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে নাকি সারাদেশে এভাবে প্রতারণা করেছে। তিনি কিছু বুঝতে পারেননি। আমরা তার নাম্বারটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিয়ে প্রতারককে গ্রেপ্তারর দাবি জানিয়েছি।’
চাটমোহর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলজার হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। যদি এই ঘটনার সাথে সদস্য সচিব ফারুক জড়িত থাকে তবে অবশ্যই জেলা কমিটির সাথে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে বুধবার রাতে চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানার সাথে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :