সিডরের ১৭ বছর

চোখের সামনে কেয়ামতের আলামত দেখেছিল উপকূলের মানুষ 

  • মাহমুদুর রহমান রনি (পাথরঘাটা)  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ১১:৫৪ এএম
চোখের সামনে কেয়ামতের আলামত দেখেছিল উপকূলের মানুষ 

ফাইল ছবি

বরগুনা: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। সেই রাতে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা। আজ সিডরের ১৭ বছর পূর্ণ হলেও মাত্র ১৫ মিনিটের সেই তাণ্ডবের কথা ভুলেনি উপকূলীয় পাথরঘাটার মানুষ, কাটেনি আতঙ্ক। 

এ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে অনেক মানুষ। ১৭ বছরেও স্বাভাবিক হয়নি স্বজন ও সম্পদ হারানো মানুষের জীবন। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে পাথরঘাটার ৩৪৯ জনসহ রগুনা জেলায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরো এলাকা হয়ে যায় লন্ডভন্ড। উপকূলের মানুষের চোখের সামনে যেন ছিলো কেয়ামতের আলামত। লাশের পর লাশ পড়েছিল উপকূলজুড়ে। কবর দেওয়ার জায়গাও পাওয়া যায়নি। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া পাথরঘাটার ৯১ জন জেলেসহ এখনো নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার ১৫৬ জেলে। বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন জানে না তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা।এখনো অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন অনেকে।

এই সকল জেলেদের কোনো মৃত্যু সনদ পায়নি স্বজনরা। যে কারণে জমি বিক্রি করতে পারছে না অনেকে। মিলছে না সরকারি সহায়তাও।

পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামে সিডরের রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেয় একটি কন্যা শিশু। তাকে সবাই সিডর বেবী মারিয়া বলে ডাকে। সেই মারিয়ার কোলে এসেছে একটি ফুটফুটে সন্তান। তবে ভালো নেই সিডর মারিয়া। অভাব অনটনে কাটছে তাদের জীবন, পাইনি কোন সরকারি সহায়তা। মারিয়ার সাথে কথা বললে এমনটা জানান তিনি। 

সিডরে স্বামী হারানো নারী লাভলী আক্তার বলেন, স্বামী ইসমাইলকে হারিয়ে অভাব অনটনে কাটছে আমাদের জীবন। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছি ভয়াল সিডারে। ছেলে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সিডরের ভয়াবহ রাত্রির কথা এখনো ভুলতে পারিনি। 

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান বলেন, এই ঝড় কেড়ে নিয়েছে পাথরঘাটার মানুষের সম্বল। কেড়ে নিয়েছে আপনজনদের। তাই এ ক্ষতি অপূরণীয়। সরকারি ও সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করলে উপকূলবাসী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। একইসঙ্গে পরবর্তী ভয়াবহতার হাত থেকেও রক্ষা পাবে। সিডরে ৯১ জেলেসহ এখন পর্যন্ত পাথরঘাটার ১৮৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের পরিবারের জন্য জিআর চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।

তিনি বলেন, সেই চাল আমরা কিছুদিন পর বিতরণ করব। সিডারে ৩৪৯ জন নিহত হয়েছে তাদের আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করে বিভিন্ন নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে তাদের সামনের চলার পথটা যেন সহজ করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

আইএ

Link copied!