ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান (দায়িত্বপ্রাপ্ত নাজির) রেজওয়ানুল ইসলাম প্রধানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসকে আসা সেবাগ্রহীতারা তার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের (ডিসি) অফিস সহায়কের চাকুরি করে কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রেজওয়ানুল ইসলাম প্রধান নামে এক কর্মচারী। যেন হাতে ‘আলাদীনের চেরাগ’ পেয়েছেন অবস্থা। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকার সুবাদে একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তিনি। সেই নিজ অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়তই করছেন অসদাচরণ। ঘুষ ছাড়া করেন না কোনো কাজ।
লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী রেজওয়ানুল ইসলাম প্রধান লাইব্রেরিয়ান হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোষামোদ করে নাজিরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অথচ যোগ্য ব্যক্তি থাকার সত্যেও লাইব্রেরিয়ান হয়ে নাজিরের চেয়ার দখল করে আছেন। এক রেজওয়ানুল ইসলামের আঙ্গুলের ইশারায় কোণঠাসা অফিসের অন্যান্য সিনিয়র কর্মচারীরা। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ফলে দুর্নীতির দৌড়ে বর্তমানে প্রথম স্থানে আছেন তিনি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজওয়ানুল ইসলাম প্রধান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান পদে যোগদানের কয়েক বছরের মাথায় ঠাকুরগাঁও শহরের হাসান এক্সরে ক্লিনিকের পাশে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। কিভাবে এত টাকার মালিক হয়ে উঠলেন এনিয়ে এলাকায় চলেছে আলোচনা সমালোচনা।
সূত্রে জানা গেছে, ডিসি অফিসে চাকুরীর সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার, অসৎ উপায়ে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের হাসান এক্সরে ক্লিনিকের পাশে জমি ক্রয় করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। শহরের নরেশ চৌহান সড়কের পাশে হলপাড়ায় ভগ্নিপতি সঙ্গে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। রোড সুগার মিলস’র পাশে তিন একর আবাদি জমি ক্রয় করেছেন। যার বাজার মূল্য এক কোটি টাকা। তার স্ত্রীর নামে ২৫ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে জমা, প্রায় ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ২টি প্রাইভেট গাড়ী, একটি লিচু বাগান, ৩ বিঘা জুড়ে ১ টি পুকুর ও জিলা স্কুল বড় মাঠের পাশে একটি বহুতলের দ্বিতীয় তলায় ১৮০০ স্কয়ার ফিটের ২টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। যার মূল্য ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমান এডিসি জেনারেল সোলেমান আলীর সাথে সম্পৃক্ত থাকার ফলে তাদের ছত্রছায়ায় এলআরফান্ডের কথা বলে ইটভাটাগুলো থেকে চাঁদা আদায় করেন তিনি। জাতীয় দিবস উদযাপনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন। এতে একেকটি দিবসে প্রায় ৬-৭ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ১/২ লক্ষ টাকার হিসাব দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের অফিসের খাত ভিত্তিক সরকারি বরাদ্দের টাকা গোপনে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ বলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, রেজওয়ানুল ইসলামের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে আরও সম্পদ বের হয়ে আসবে বলে লিখিত অভিযোগে জানানো হয়।
সামান্য বেতনের এক কর্মচারীর কীভাবে এতো কোটি টাকার সম্পদ বানালো তা খতিয়ে দেখতে দুদকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, এক কর্মচারী যদি এতো সম্পদের মালিক হয়, তাহলে অন্যান্য কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের এর চেয়ে দ্বিগুণ সম্পদ গড়ে তুলবে এটাই স্বাভাবিক।
অভিযোগের বিষয়ে রেজওয়ানুল ইসলাম প্রধান জানান, শহরের হাসান এক্সরে ক্লিনিকের পাশে নির্মিত বহুতল ভবনটি তার ভাই-বোন তাকে উপহার দিচ্ছেন। আর বাকি যেসব অভিযোগের তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা কোনোটারই ভিত্তি নেই।
এর আগে, একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যও গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে জমি কিনে সরকারি প্রকল্পে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে।
ডিসি অফিসে সামান্য বেতনের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম এখন ঠাকুরগাঁও শহরের বড় মাঠের পাশে নির্মাণ করছেন বহুতল আলিশান বাড়ি। এছাড়াও শহরের গোয়ালপাড়ায় ৮ শতক জমির ওপর বসতভিটা, সদরের শিংপাড়া এলাকায় তার ৬০ শতক জমি ও আবাদি ১ একর জমি রয়েছে শহিদুল। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলাও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। সবশেষ গত কয়েক মাস আগে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য প্যাকেটজাতকরণে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে শহিদুলকে বদলী করা হয় কুড়িগ্রামের ভুরাঙ্গামারী উপজেলা কার্যালয়ে।
অপরদিকে, ডিসি অফিসের আরেক কর্মচারী তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়কের চাকুরি করে কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তরিকুল ইসলাম নামে এক কর্মচারী। যেন হাতে ‘আলাদীনের চেরাগ’ পেয়েছেন অবস্থা। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকার সুবাদে একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তিনি। গ্রামের সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রেকর্ড রুমের জাবেদা নকল অল্প সময়ে দেয়ার কথা বলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। অফিসে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সিএ’র অজান্তে তার কম্পিউটারে অনলাইনে আবেদন করেন। রেকর্ড রুমের যোগসাজসে হেল্পডেক্সে নকল সরবরাহ না করেই তার কাছে রেখে দেন। পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জাবেদা নকল সরবরাহ করেন কর্মচারী তরিকুল ইসলাম।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত ফারজানা বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সে যেই হউক।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :