কাঁঠালিয়ায় হিন্দু বিয়ে নিবন্ধনে অনীহা, ১১ বছরে নথিভুক্ত মাত্র ৭০

  • ঝালকাঠি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
কাঁঠালিয়ায় হিন্দু বিয়ে নিবন্ধনে অনীহা, ১১ বছরে নথিভুক্ত মাত্র ৭০

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় সচেতনতা ও প্রচারণার অভাবে ১১ বছরে মাত্র ৭০টি হিন্দু মেয়ের বিয়ের নিবন্ধন হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই অফিস খুলে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন উপজেলার হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার সমরেশ মন্ডল। ২০১২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের অনুমোদন দেন। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারী এ-সক্রান্তে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

উপজেলা পরিসংখান অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৬৪৩জন হিন্দু ধর্মালম্বী বসবাস করেন।

হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার সমরেশ মন্ডল জানান, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ বছরে মাত্র ৭০টি বিয়ের নিবন্ধন হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে অফিস ভাড়া ও সরকারি ফি টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছি। মূলত সচেতনতার অভাবে এমনটি হচ্ছে।  প্রথম বছর উপজেলায় কয়েকটি নিবন্ধন হয়েছে।  

সমরেশ মন্ডল আরও জানান, প্রতি বছর উপজেলায় শতাধিক হিন্দু বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তার কাছে বিয়ে নিবন্ধনের জন্য কোনো পক্ষই আসেনা। ফলে অফিস খুলে খাতা নিয়ে বসে থাকেন। এভাবে এ পেশায় টিকে থাকা সম্ভব না বলেও জানান তিনি। 

কাঁঠালিয়া হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ৬, ২০১৪ সালে ৫, ২০১৫ সালে ৬, ২০১৬ সালে ৫, ২০১৭ সালে ৮, ২০১৮ সালে ৭, ২০১৯ সালে ৭, ২০২০ সালে ৫, ২০২১ সালে ৭, ২০২২ সালে ৮, ও ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে। 

উপজেলার দক্ষিণ কৈখালী গ্রামের পুরোহিত অমল চক্রবর্তী ও আমুয়া গ্রামের পুরোহিত গৌতম চক্রবর্তী জানান, বৈবাহিক জীবনে নারীর নিরাপত্তার জন্য নিবন্ধন করা প্রয়োজন। আমরা সচেতনতায় কাজ করছি। প্রচার প্রচারণা ও সচেতনতার অভাবে হিন্দুদের বিয়ে রেজিষ্টেশন কম হচ্ছে। সর্বশেষ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর আউরা গ্রামের জয়দেব হাওলাদারের মেয়ের বিয়ে হয়।

জয়দেব হাওলাদার জানান, মেয়ে বিয়ে দিলে নিবন্ধন করতে হবে এমন কথা কোনোদিন শুনিনি। আমরা অগ্নিকে স্বাক্ষী রেখেই বিয়ে দিয়ে ও করিয়ে আসছি। এ ব্যাপারে মাইকিং কিংবা কোন প্রচার প্রচারণাও করেনি।

উপজেলার আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য নকিরুল ইসলাম মুন্সি জানান, প্রচারণা ও সচেতনতার অভাবেই এমনটি হচ্ছে। মুসলিম আইনে নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও হিন্দু আইনে এরকম বাধ্যবাধকতা না থাকায় হিন্দু মেয়েদের নিবন্ধন ছাড়াই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তার পরিবার। উপজেলার হিন্দু নেতারা যদি প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দুদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ে আলোচনা করতো তবে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতো। 

উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র ভুষন দাস জানান, উপজেলায় ১১ বছরে মাত্র ৭০টি হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিয়ের নিবন্ধন হয়েছে বিষয়টি শুনে অবাক হলাম। রাষ্ট্রীয় ও দাম্পত্য জীবনে নানা সমস্যায় আইনি সহায়তায় ও নানা কারণে বিয়ে নিবন্ধন প্রয়োজন। অন্যদিকে আইনটি কড়াকড়ি না থাকায় অনেক হিন্দু মেয়েকে বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়। আমরা উপজেলার সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতার সঙ্গে আলোচনা করে, হিন্দু মেয়েদের বিয়ে নিবন্ধনের প্রচার ও সচেতনার ব্যবস্থা করবো। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.জহিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার হিন্দু নেতাদের নিয়ে সচেতনতা ও বিয়ের নিবন্ধনের প্রচারের বিষয়ে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এসএস

Link copied!