লালমনিরহাট: উত্তরের আগাম শীত ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে আলুর বীজ বপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা। বাজারের উর্ধগতি ও দেশের কঠিন পরিস্থিতিকে কাটিয়ে উঠতে কৃষক পরিবার গুলো আলু রোপণের মাধ্যমে তারা আর্থিক সচ্ছলতার আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন। স্বল্প সময়ে উৎপাদন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ার আশায় বর্তমানে এখানকার কৃষকদের আলু চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
জেলার ৫টি উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে এখন পুরোদমে চলছে আলু রোপণের মহাউৎসব। আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে না তুলতেই এখন সেইসব জমিতে আলু চাষের ধুম লেগেছে। অর্থকারী ফসল হিসেবে সবার ওপরে রয়েছে আলু।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে আলু বীজ রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু আলুর বীজ সার কীটনাশক ও মজুদের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও দ্বিগুণ হয়েছে। লালমনিরহাটে আলুর বীজের চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার ৮’শ ৪৪ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি বীজ ৬৮ টাকা কেজি সরকারি নির্ধারিত হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৮০/৮৫ টাকায়। আর কার্টুন আলু বীজ কেজিপ্রতি ৬০৪ টাকা পড়ছে। তবে কম খরচে সঠিক চাষাবাদের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাগণ আলু চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আলু বীজ রোপণে মাঠে কাজ করছেন চাষীদের পাশাপাশি পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা। যেসব চাষীরা একটু আগাম বীজ রোপণ করতে পেরেছেন, তাদের ক্ষেতে চলছে পরিচর্যার কাজ। আলু রোপণ করে বাম্পার ফলন হওয়ার আশায় এবারের ফলনে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক এনামুল হোসেন (৩৮) জানান, শীতের মৌসুম আলু চাষের জন্য উপযোগী সময়। তাই পরিবারের লোকজন ও আশেপাশের কিছু গৃহকর্মীদের নিয়ে তিন বিঘা জমিতে আলু রোপণ করছি। গত বছর আলু রোপণ করে ভালো দাম পেয়েছি। তাই এবারও আলু রোপণ করতেছি। তিনি আরো জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু রোপণে খরচ বেড়ে গেছে, একই সাথে কৃষক শ্রমিকরাও তাদের দিনমজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এবার আলু উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাবে।
স্থানীয় আরেকজন কৃষক মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, এক একর জমিতে আলু চাষ আবাদ করতে ৭০০-৮০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়। এক একর জমিতে আলুর আবাদ করতে ১৩০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ২৫০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ৩০ কেজি জিপসাম এবং ৫-৭ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন হয়। তবে এ সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কমবেশি হতে পারে। তিনি আরো জানান, এক একর জমিতে ৪-৫ টন জৈবসার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যায়। আলু উৎপাদনে আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরি প্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কান্দিতে মাটি তুলে দেওয়া, বালাই দমন, মালচিং করা আবশ্যকীয় কাজ।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, এই জেলায় প্রায় ৫০ ভাগ আলু উৎপাদন হয়ে থাকে সদর উপজেলা থেকে। আলু চাষের জন্য আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় ধান কর্তনের পর কৃষকরা আলু চাষ আবাদ শুরু করেন। চলতি বছর সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮.৫ থেকে ২৯ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন বলেন, বর্তমানে আলু চাষের জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী অফিসাররা মাঠে কাজ করছেন। চলতি বছর জেলায় উন্নতমানের আলুর বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :