পিরোজপুর: নাজিরপুরের সেখমাঠিয়া ইউনিয়নে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্কের এক নাম বিএনপি নেতা মাসুম মিনা। গড়ে তুলেছেন এক বিশাল বাহিনী।
যার দ্বারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাসুম মিনা সেখমাঠিয়া ইউনিয়নের বাকশী গ্রামের মৃত লতিফ মিনার ছোট ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, তিনি শেখমাঠিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য। গত ৫ ই আগস্টের পর এই মাসুম মিনা বাহিনীর উত্থান ঘটে।
জোর করে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মারামারি, হিন্দুদের ওপরে অমানবিক নির্যাতন, জোড় পূর্বক জমির ফসল কেটে নেওয়া ও সরকারি খাস জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। মাসুম বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান স্থানীয়রা। মাসুম বাহিনী সুসংগঠিত হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি মাসুম ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষক রেজাউল শেখ নামের এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করলে বেরিয়ে আসে এমন সব ভয়ংকর তথ্য। তার এ অপকর্মের সঙ্গে স্থানীয় কতিপয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী’রা সেজেছে একটি চক্র।
রেজাউল শেখ জানান, আমি স্থানীয় বাসুদেব চ্যাটার্জীর কাছ থেকে ২৭ কাঠা জায়গা দীর্ঘ দিন ধরে নগদ বান্দা (বাৎষরিক চুক্তিতে) নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাই, গত ৫ ডিসেম্বর আমার ওই জামিতে থাকা আমন ধান মাসুম মিনা বাহিনী দিয়ে কেটে নিয়ে যায় আমি আকুতি-মিনতী করে বাধা দিলে আমাকে বেধরক মারধর করে।
আমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার স্ত্রী আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নিকট অভিযোগ দিলে মাসুম মিনার বাহিনী দিয়ে আমার বাড়িতে ৩ বস্তা (৩ মন) ধান দিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বাসুদেব চ্যাটার্জী জানান, এ জমি আমার বাবার অংশ, আমার ভোগ দখলে। ২০১৫ সালে একদল লোকে ডিসিআর কাটছিল তবে মাসুম মিনা না। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট করেছি, বিভাগীয় কমিশনারে মামলা করেছি। দুই জায়গা থেকেই জায়গা স্টে করেছে, ডিসি স্যার আমাকে নোটিশ দিয়ে দখল দিয়েছে।
ইউএনও কে বলেছে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করবেন না। এই ভিপি জমি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান। আমার বর্গাচাষীদের মারধর করে ধান কেটে নিয়ে গেছে এবং শোনা যাচ্ছে আমার জমি নাকি তারা এসে ভাগ করে নিবে (মাসুম মিনা বাহিনী)। আমি এদের ভয়ে এক প্রকার গৃহবন্দি। আমার ঘড়ে আগুন ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়।
রেজাউল শেখ এর অভিযোগের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তার বাহিনী সাংবাদিকদের ওপরে চড়াও হয়ে উঠে। মাসুুমের কাছে বক্তব্য চাইলে তিনি সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বলেন, ও (রেজাউল) তো ছেচা (মারধর) আবার খাবে, এবং নোংড়া ভাষায় গালাগালি করে বলেন, অভিযোগ কেন দিয়েছে ওর ধান তো ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্যের ধান কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, ওটা ভিপি জমি আমাদের নামে ডিসিআরের জন্য আবেদন দিয়েছি।
মাসুম বাহিনীর এক সদস্য সুরঞ্জিত চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ধান কাটতে বলেছেন ইউএনও, এসিল্যান্ড, আমরা তাদের নির্দেশে ধান কেটেছি। শুধু আমার কাছে কেন জিজ্ঞেস করেন, ওখানে তো আরো ৪০ জন ছিল, তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষাতকার নিতে পারেন না ?
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ জানান, এখানের এসিল্যান্ড বদলি হয়ে গেছে। এখনো কেহ জয়েন্ট করে নাই সো এসিল্যান্ড এমন কথা বলবে কি ভাবে? আর আমি কাউকে ধান কাটার অনুমতি দেয়নি। এ তথ্য মিথ্যা। আমি এবিষয়ে কিছু জানিই না আপনাদের কাছ থেকে এই শুনলাম। ওই সুরঞ্জিত নামের ব্যক্তিকে আমি চিনিও না। ভুক্তোভোগী কেউ আমার কাছে অভিযোগ দিলে আমি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, হুমকি ধামকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তাদের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই বাহিনীতে শতাধিক সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সুরঞ্জিত চক্রোবর্তী, উজ্জ্বল শেখ, খোকা শেখ, মো. মহি শেখ, আবুল শেখ, শহিদুল ইসলাম রাঙ্গা, দুলু শেখ, তৌহিদ শেখ অন্যতম। এই বাহিনী সংঘবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। এছাড়া জোর জবরদস্তি জমি দখল করে দেওয়ার টেন্ডার নিয়ে থাকে।
তথ্য রয়েছে, শেখমাটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বাকুলি গ্রামের অনিল ভট্টাচার্যের পুত্র অবসরপ্রাপ্ত এনবিআর কর্মকর্তা পরিমল ভট্টাচার্যের কাছ থেকে গত ৯ আগস্ট জোরপূর্বক ৫৫ নং বাকুলি মৌজায় ৮২ শতাংশ জমি নাজিরপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে তখনকার সাব রেজিস্টার জোবায়ের হোসেনের সহযোগিতায় লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যার দলিল নং ১৭৮৩ /২৪।
অবসরপ্রাপ্ত এনবিআর কর্মকর্তার পরিমল ভট্টাচার্য জানান, দলিল লিখে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে ভয় দেখিয়ে জোড়পূর্বক মাসুম মিনা আমার কাছ থেকে ৮২ শতক জমি লিখে নেয় এটা জুলুম হয়েছে আমার প্রতি। একথা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি ও দেয় মাসুম মিনা।
জমি জোড় পূর্বক লিখে নেওয়ার বিষয়ে মাসুম মিনার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি তার নিকট থেকে জমি টাকা দিয়ে কিনেছি তার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে তৎকালীন সাবরেজিস্টার কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মুঠো ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় বিধায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাজিরপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) বিকাশ চন্দ্র জানান, রেজাউল সাহেব থানায় কোনো অভিযোগ দিয়েছে কিনা আমার নলেজে নাই। তবে তিনি যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো: মিজানুর রহমান দুলাল জানান, বিএনপি একটি বড় স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, এখানে কোনো চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ, লুটকারীর স্থান নাই। মাসুম মিনার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এখনো আসে নাই। যদি কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয় আমি তাকে স্থায়ী বহিস্কার করব। তারেক রহমানের নির্দেশ কোনো অপকর্মকারী আমাদের দলের মধ্যে থাকতে পারবে না।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :