খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় এখনও স্বৈরশাসকের প্রচারণা

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চালের বস্তায় এখনও স্বৈরশাসকের প্রচারণা

সিরাজগঞ্জ: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাত মাস পরেও সিরাজগঞ্জের তাড়াশে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে হতদরিদ্রদের জন্য সুলভ মূল্যের খাদ্য শস্য বিক্রয় কেন্দ্রেগুলোতে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রচার অব্যাহত রেখেছেন।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের পৌষার বাজারে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণ করা হয়। এ সময় সুবিধাভোগীদেরকে দেওয়া ৩০ কেজি ওজনের একেকটি চালের বস্তায় এবং ব্যানারে হাসিনা সরকারের স্লোগানটি দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় থাকা উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের ১৬টি কেন্দ্রের ডিলারদের বিতরণ করা চালের বস্তাগুলোতেও ছিল স্লোগানটি। 

এদিকে, এখনো পুরনো স্লোগান যুক্ত বস্তা পরিবর্তন না করায় সুবিধাভোগীসহ স্থানীয় জনগণের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। 


 
উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের পৌষার গ্রামের মো. শাহ আলম বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জনগণ বিগত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন যদি সরকারি চালের বস্তায় সেই শাসকের নাম দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে, পুরোনো শাসনের প্রেতাত্মারা এখনো লুকিয়ে আছে। বিষয়টি কষ্টের।

এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হক মেহেদী তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দশ’ এ  স্লোগান শুধু ব্যানারে নয়, উপজেলার ১৬টি কেন্দ্রে বিতরণ করা চালের বস্তাতেও রয়েছে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা কোনো স্বৈরশাসকের নাম থাকা যাবে না, তবু এখনো এই স্লোগান বস্তায় রয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিনেও কেন এই স্লোগান মুছে ফেলা হয়নি? প্রশাসন কি ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিষয়টি উপেক্ষা করছে? নাকি খাদ্য কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জনগণের ত্রাণ স্বৈরশাসকের প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠছে? একজন স্বৈরশাসকের নাম ত্রাণের সঙ্গে যুক্ত থাকা মেনে নেওয়া যায় না। স্বৈরশাসকের নামের স্লোগান অপসারণে প্রশাসনের কেন এত উদাসীনতা? এহেন কর্মকাণ্ড কি প্রমাণ করে না যে, সরকারি প্রশাসন নিরপেক্ষতার বদলে একদলীয় প্রচারের অংশ হয়ে উঠেছে? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।

তাড়াশ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা মেহেদী হাসান নিরব বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু তার দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে বিভিন্ন দপ্তরে বসে আছেন। যারা এখনো হাসিনার নাম প্রচারে ব্যস্ত। অভ্যুত্থান পরবর্তীতে কোন সরকারি কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার স্লোগান সরিয়ে নেয়া উচিত ছিল। এতদিনেও খাদ্য বিভাগের বস্তায় এমন  স্লোগান থাকা দুঃখজনক। যদি কর্তৃপক্ষ জেনে বুঝেই আগের বস্তা ব্যবহার করে তাহলে ধরে নেব তাদের মধ্যে এখনো হাসিনা প্রীতি রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাড়াশ পৌর শাখার সভাপতি মো. কাওছার হাবীব বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে রাষ্ট্রীয়সহ বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নাম মুছে ফেলা হলেও হাসিনা প্রীতি যায়নি তাড়াশ উপজেলায় খাদ্য অধিদপ্তর ও তাদের কর্তৃক পরিচালিত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১৬ জন ডিলারদের। তারা রীতিমতো স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা স্মরণে তার উন্নয়নের প্রচার বার্তা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।  

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এই বস্তাগুলো আগের টেন্ডারে নেওয়া এজন্য এমন হতে পারে। আর চালসহ বস্তাগুলো জেলা থেকে সরাসরি ডিলারদের কাছে পৌঁছে যায়। তবুও আমরা সকল এলএসডিকে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছি সকল বস্তা থেকে স্লোগান মুছে দেয়ার জন্য।  
আইএ

Link copied!