নোয়াখালীঃ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতক শিশু মৃত্যু অভিযোগে আদালতে মামলা করেছে স্বজনেরা। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান হাসপাতালের আর.এম.ও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম। অপরদিকে ডাক্তারের অবহেলায় আরও এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন নবজাতকের পিতা বাদশা মিয়া।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে বেগমগঞ্জের হাজীপুর গ্রামের নবজাতকের দাদী তাহেরা বেগম বাদী হয়ে নোয়াখালীর সিনিয়র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতে হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুন নাহার, সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদার (৪৮), ডা. নাছির (ইন্টার্নি) সহ নয় জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর ভোর ৫টায় বেগমগঞ্জের হাজীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তাহেরা বেগম (৫১) তার পুত্রবধূকে প্রসব বেদনা নিয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ২নং ওয়ার্ডের গাইনী বিভাগে ভর্তি করেন। কিন্তু হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী হাওলাদারকে বার বার ডাকা সত্বেও তিনি ঘুম থেকে উঠেননি। এক পর্যায়ে নার্স বিথীকা রাণী ঘুম থেকে উঠে ইন্টার্নি ডা. নাছির ও আয়া মারজাহানের যোগসাজশে জানান, তাদেরকে টাকা দিলে তারা নরমাল ডেলিভারী করানোর জন্য চেষ্টা করবেন। টাকা না দিলে সিজার হবে এবং প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে হবে রোগীকে।
এ সময় গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. লাইনুর নাহারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি হাসপাতালে আসেনি। ওই সময় ম্যাটস ছাত্র নাইম ভিকটিমের লজ্জা স্থানের ভিডিও ধারণ করে। ভিকটিমের শাশুড়ী এর প্রতিবাদ করলে সে বলে এটা আমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য ভিডিওটি লাগবে। সিনিয়র ডাক্তার, নার্স চার্জে থাকা সত্বেও ভিকটিমকে লেবার রুমে না নিয়ে সহকারী আয়া ও ম্যাটের ছাত্র দিয়ে ডেলিভারী করায়। ওই সময় নবজাতকের ঘাড় ধরে জোর পূর্বক টেনে ডেলিভারী করানোর কারণে নবজাতকের মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কালো হয়ে রক্ত জমাট বেধে যায়। দু’জন আয়া টেনে হিঁচড়ে প্রসবের সময় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জীবিত পুত্র সন্তন প্রসব হওয়ার মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে ওই নবজাতকটি শিশু মারা যায়।
ভিকটিমের শাশুড়ি তার পুত্রবধূর শরীর থেকে বাহির হওয়া রক্তের ছবি ফোনে ধারণ করলে তাকে একটি কক্ষে আটক করে ভিকটিমের কাগজপত্র লুকিয়ে ফেলে। এসব বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে অবহিত করলে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরে এ ঘটনায় সুধারম থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ মামলা নিতে অসম্মতি জানায়। পরে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেন।
অপর দিকে সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়ন আবুল বাসার প্রকাশ বাদশা মিয়ার বাড়িতে নরমাল ডেলিভারী হওয়া নবজাতককে সোমবার রাতে জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে (২নং) ভর্তি করে। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে নবজাতকের নাকে মুখে রক্ত বের হলে বার বার ডিউটি ডাক্তারকে জানানোর পরও তিনি কোন কর্ণপাত করেননি, এমনকি একবার নবজাতককে দেখতেও আসেননি। পরে ভোর পাঁচটায় নবজাতক কন্যা শিশুটি মারা যায়। নবজাতকের পিতা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু ওয়ার্ড (২) ইনচার্জ ডা. অপু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নবজাতকের ওজন কম ছিল ও তার ফুসফুসে সমস্যা ছিল। এজন্য মারা গেছে। ডাক্তারের অবহেলায় নয়।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় তিন সদস্যা বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, শিশু বিশেষজ্ঞ কনসাল্টটেন্ট নুরুল আফসার এ কমিটির প্রধান।
সোনালীনিউজ/জেএ/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :