নোয়াখালী: জেলায় যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক নোয়াখালী জানায়, জেলায় গত অক্টোবর মাসে ৪১টি নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
এরমধ্যে ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ চেষ্টা ৭টি, হত্যা ৫টি, অপহরণ ১টি, আত্নহত্যা ১টি, শারীরিক নির্যাতন ২টি, বিবস্ত্র করে নির্যাতন ১টি, শ্লীলতাহানির চেষ্টা ২টি, যৌন হয়রানি ১টি, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাড়িতে হামলা ও হয়রানি ২টি।
নেটওয়ার্ক নেতৃবৃন্দ জানায়, একই দিনে ২টি ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় গত ৮ অক্টোবর সুবর্ণচরে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণ, কবিরহাটে বিধবা নারীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ।
২১ অক্টোবর সেনবাগে ৩ মাসের অন্তসত্ত্বা গৃহবধূকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ, চাটখিলে যুবলীগ নেতা কর্তৃক চাচীকে ধর্ষণ। ২২ অক্টোবর বেগমগঞ্জে চাকরি ও বিয়ের প্রলোভনে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট কর্তৃক ধর্ষণ, কোম্পানিগঞ্জে বিয়ের প্রলোভনে স্বামী পরিত্যাক্তাকে ধর্ষণ।
২৬ অক্টোবর বেগমগঞ্জে মাদ্রাসা ছাত্রকে ধর্ষণ ও হাতিয়ায় গৃহকর্মীকে ধর্ষণ। ২৯ অক্টোবর হাতিয়ায় দিনে দুপুরে বিধবাকে ধর্ষণ ও কবিরহাটে মাদ্রাসার শিশু (৯) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ।
এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ৭টি হয়েছে সেনবাগ, হাতিয়া, চাটখিল ও সদরে।গত ৩০ অক্টোবর ধর্ষণ চেষ্টা করা হয় ৩টি। সেনবাগে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টা ও রিক্সা থেকে তুলে নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টা। হাতিয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ও ঘরে ঢুকে তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টা। সদরে ১২ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়। চাটখিলে মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়।
৫টি হত্যার ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ২টি হত্যাকান্ড। একটি সুবর্ণচরে ছেলে কর্তৃক মাকে ৬ টুকরা করে হত্যা অপরটি সদরে সৎ মাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।
এছাড়াও সদরে বিয়ে করতে চাওয়ায় প্রেমিকার গলা কেটে হত্যা, হাতিয়ায় যৌতুকের দাবিতে নববধূকে পিটিয়ে হত্যা ও স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
অপহরণের ১টি ঘটনা ছিল সুবর্ণচরে, মাদ্রাসা ছাত্রী অপহরণের ২৩ দিন পর উদ্ধার। আত্নহত্যার ১টি ঘটনা ছিল হাতিয়ায়। স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্নহত্যা।
শারীরিক নির্যাতন ২টি ছিল সদর ও সুবর্ণচরে। গত ৫ অক্টোবর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পেলে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয় ২টি সোনাইমুড়িতে। ঘরে ঢুকে স্কুল ছাত্রী ও মাকে শ্লীলতাহানি করা হয়। হাতিয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে।
এছাড়া বেগমগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রী কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাতে বাড়িতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনা ঘটে। সোনাইমুড়িতে আওয়ামীলীগ নেতার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মহিলা কর্মীকে হয়রানির অভিযোগ করা হয়।
নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতার ৪১টি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে হাতিয়ায় ১০টি, সদরে ৬টি, সুবর্ণচর ও বেগমগঞ্জে ৫টি করে, সোনাইমুড়ি ও চাটখিলে ৪টি করে, সেনবাগে ৩টি এবং কোম্পানিগঞ্জ ও কবিরহাটে ২টি করে।
এছাড়া জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী (সংশোধিত) এবছরের গত ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত) ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪৩টি, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৫টি, যৌতুকের জন্য নির্যাতনে মামলা হয়েছে ২৭টি, নারী-শিশু অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২টি। মোট ১১৭টি নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালীতে গত ১ (অক্টোবর) মাসে ১৯টি ধর্ষণসহ জেলায় ক্রমবর্ধমান নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ও জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম আবদুল আলীম সহ নেটওয়ার্ক নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে তীব্র প্রতিবাদ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একইসাথে নেতৃবৃন্দ ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :