ইউএনওকে পিটানোর হুমকি দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

  • লালমনিরহাট প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২০, ০৫:৫৮ পিএম
ইউএনওকে পিটানোর হুমকি দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

লালমনিরহাট: ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার অংশ না পেয়ে ইউএনওকে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে  উপজেলা পরিষদের ১৭ জন কর্মকর্তার গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা চলার সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের অংশ দাবি করেন। এ সময় ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন সরকারি বিধি মোতাবেক তালিকা প্রণয়নের কথা বললে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এর কিছুক্ষণ পরে ইউএনও অফিস সংলগ্ন করিডোরে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরাটি উপজেলা চেয়ারম্যান তার একজন ব্যক্তিগত লোক দিয়ে খুলে ফেলতে থাকেন। বিষয়টি ইউএনও'র  দৃষ্টি গোচর হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সিসি টিভি ক্যামেরা খোলার দৃশ্যটি নিজের মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতে গেলে চেয়ারম্যান তাকে (ইউএনও কে) অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে বলেন, ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি? উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?

এ অবস্থায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাকেও ‘ঘাড় ধরে উপজেলা পরিষদ থেকে বের করে দেবো’ বলে হুমকি দেন। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এ সময় অন্যান্য অফিসার এর প্রতিবাদ জানালে তাদেরও গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান।

এদিকে খবর পেয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পরে একই দিন রাতে ইউএনওসহ উপজেলার ১৭জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০-৭৬৪।  

এর অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগে উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, আমরা সব দফতরের কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।  

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস সাংবাদিকদের বলেন, জনস্বার্থে গত অর্থ বছরের সব দফরের কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়ায় অফিসাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইউএনও নিজেই বিধি বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারের নামে এডিপি ও আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর কাজ করছেন। স্থানীয় ভাটা মালিকদের চাপ দিয়ে ইট নিয়ে এসে উপজেলা পরিষদে রেখেছেন। তদারকি কর্মকর্তা হয়ে নিজে কাজ করার বিষয়টির প্রতিবাদ করায় ইউএনও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তবে এসব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।  

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর  বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিবকে (ডিডিএলজি) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এসএ/এসআই

Link copied!