বাগেরহাট: ‘তোমরা কি আমার পাখিরে নিয়ে আইছো? আমার পাখি ঈদের জন্য এই জামা কিনেছিল। ও ঘুরতে যাবে। শান্তরে নিয়ে ঘুরতে যাবে। এই জামা গায় দিলে আমার পাখিরে পরীর মতো লাগতো। তোমরা আমার পাখিরে এতে দ্যাও।’ স্বামীর হাতে নিহত কলেজছাত্রী সোমা আক্তারের ঈদের জন্য কেনা নতুন জামা নিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলো তার মা কোমেলা বেগম।
শুক্রবার (১৪ মে) সকালে ঈদের নামাজের পর নিহত সোমা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। নিহতের মা কোমেলা বেগম ও বড় বোন নাজমা আক্তার ঘরের সিঁড়িতে বলে বিলাপ করছিল। আর প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছিল। তাদের বাড়িতে নেই ঈদের কোন আয়োজন।
কোমেলা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সোমা ওর স্বামী শান্তকে খুব ভালবাসতো। নিজে দাঁত ব্রাশ করে দিত। অনেক যত্ন করতো। শান্ত বেকার, তারা আমার বাড়িতে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে থেকেছে। আরও থাকতো, কোন অসুবিধা হলে আমার পাখিকে আমার কাছে দিয়ে যেত। ও কেন আমার পাখিরে মেরে ফেললো? ওর কি একটুও দয়া হয়নি?
গত শনিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বাগেরহাট শহরে দশানী উত্তরপাড়া এলাকায় টিকটক ও লাইকি অ্যাপে আপত্তিকর ছবি পোস্ট ও পরকীয়ার অভিযোগ তুলে সোমা আক্তারকে (১৯) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘাতক স্বামী আব্দুল্লাহ আল নাইম শান্ত (২৩)। এরপর বাগেরহাট মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করে সে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার সোমা আক্তার বাগেরহাট সদর উপজেলার সিংড়াই গ্রামের আব্দুল করিম বখসের মেয়ে। সে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল।
ঘাতক স্বামী আব্দুল্লাহ আল নাইম শান্ত বাগেরহাট শহরের দশানী উত্তরপাড়া এলাকার গোলাম মোহাম্মাদের ছেলে। সে ঢাকায় একটি বাইয়িং হাউসে কাজ করত। প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে ২০১৯ সালে নাইম ও সোমার বিয়ে হয়।
আব্দুল্লাহ আল নাইম শান্তর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, লাইকি অ্যাপ ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোমার অ্যাকাউন্ট ছিল। সোমা সেসব অ্যাকাউন্টে থেকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করতো বলে অভিযোগ শান্তর। এসব নিয়ে স্বামী নাইমের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বে সৃষ্টি হয়। শান্ত শনিবার ঢাকা থেকে ফিরে সোমাকে ফোন দিয়ে বিকালে বাবার বাড়ি থেকে দশানীস্থ নাইমের বাড়িতে আনেন। সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস দিয়ে স্ত্রী সোমাকে হত্যা করে নাইম। নাইমের বাবা-মা ঢাকায় থাকায় বাড়িতে শুধু তারা দু’জনই ছিল।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর শাফীন মাহমুদ জানান, স্ত্রীকে হত্যাকারী আব্দুল্লাহ আল নাইম ওরফে শান্ত থানায় আত্মসমর্পণ করে। সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে শান্ত কারাগারে রয়েছে।
সোনালীনিউজ/এইচএন
আপনার মতামত লিখুন :