দাফনের প্রস্তুতির সময় উদ্ধার, হাসপাতালে মৃত্যু!

  • বগুড়া প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২১, ০৪:২১ পিএম
দাফনের প্রস্তুতির সময় উদ্ধার, হাসপাতালে মৃত্যু!

ছবি : নাসির মণ্ডল

বগুড়া: বগুড়া সদর উপজেলায় কঙ্কাল প্রায় অবস্থায় উদ্ধার হওয়া নাসির মণ্ডল (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার পর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়।

এর আগে শুক্রবার রাতে স্থানীয়ারা নাসিরকে মৃত ভেবে খাটিয়া এনে ধর্মীর রীতিমতো দাফনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তবে, ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে উপশহর ফাঁড়ি পুলিশ তাকে পালসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে কঙ্কাল প্রায় অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়।

নাসিরের বন্ধু সুজন জানান, নাসিরের এক সময়ের প্রচুর টাকা ও আড়াই বিঘা জমি ছিল। তবে, নেশা করাসহ বিভিন্ন বাজে কাজে তিনি নিজের ভিটেমাটি বেচে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এজন্য তার স্ত্রী এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে শোকে নাসির খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তার দুই মেয়ে শহরে বিয়ে দিলেও বাবার কর্মকাণ্ডের জন্য কেউ খোঁজ রাখতো না। শুধু মাত্র ফলের রস পান করে নাসির জীবনধারণ করতেন। গত তিনদিন আগে তিনি পালসা প্রাইমারি সরকারি স্কুল মাঠে এসে থাকা শুরু করেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিবেশীরা তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও তিনি খাবার খাইতেন না।

নাসিরের বোনের স্বামী সাইদুল বলেন, শুক্রবার এশার নামাজ পড়ে আমি তাকে দেখতে আসি। ওই সময় দেখি তার কোনো নড়াচড়া নেই। পরে স্থানীয়রা এলে আমরা ভেবে নেই নাসির মারা গেছেন।

উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম বলেন, স্থানীয় এক যুবক ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে আমরা নাসিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।  এর আগে স্থানীয়রা তাকে মৃত ভেবে খাটিয়া এনে দাফনের কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। নাছিরকে শত শত উৎসুক জনতার মাঝে কেউ যাচাই করে দেখেনি তিনি বেঁচে আছেন কিনা। আমাদের আগে জানালে আর সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন।  

তিনি আরও বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় তার মরদেহ আমরা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।

এ বিষয়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, নাসির মূলত তার কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবার ও সমাজ কাঠামো থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। এজন্য তিনি একপর্যায়ে একাকী ও সবার থেকে আলাদা জীবন বেছে নেয়। পাশাপাশি স্থানীয়দের ভূমিকা বর্তমান সমাজের সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবকে তুলে ধরে। মানুষ দিন দিন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে যা সমাজ ব্যবস্থার জন্য নেতিবাচক।

সোনালীনিউজ/এসএন  

Link copied!