রাজবাড়ী : সরকার ঘোষিত সর্বাত্বক কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে ২১ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আজ সাধারন যাত্রীর ঢল নেমেছে। পবিত্র ঈদুল আযহার কারণে টানা আট দিন ছুটির পর শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধের কথা ঘোষণা করেছে সরকার। এরই মধ্যে ঈদের ছুটি কাঁটিয়ে অনেকে কর্মমুখি হচ্ছে। গতকাল যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেও আজ বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের চাপ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়ীত হচ্ছে।
যানবাহন বন্ধ থাকায় এসব যাত্রী রিকসা, মোটর সাইকেল, ব্যাটারি চালিত গাড়ি সহ বিভিন্ন ছোট্ট ছোট গাড়িতে ঘাটে এসে পৌছেছেন। অধিকাংশ যাত্রী বিভিন্ন অলিগলির পথের সহায়তা নিয়েছেন। সারাদিনের থেমে থেমে তুমুল বৃষ্টি আর করোনার মহামারী ভয়ানক থাবা কোন কিছুই থামাতে পারেনি তাদের।
শনিবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিভিন্ন উপায়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে যানবাহন সংকটে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা এসব যাত্রীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো যানবাহন না থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে অনেকটা ফাঁকা অবস্থায় ফেরিগুলোকে দেখা যায়।
কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শনিবার ভোর থেকেই ঢাকামুখী যাত্রীরা অটোরিকশা, থ্রি হুইলাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছান। অনেক শ্রমজীবী মানুষ ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে ফেরি ঘাটে পৌঁছান। ফেরিগুলো ঘাটে আসা যানবাহন ও মানুষ নিয়েই ঘাট ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা। একেবারে বিপাকে পড়া মানুষজন বৃষ্টির মধ্যেই বাইরে বের হয়েছে। কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ মাথায় পলিথিন মুড়ে বা রিকশায় করে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে নামছেন। আবার অনেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা মাহেন্দ্র রিজার্ভ করে ঘাটে আসছেন। তারা কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়েই সরাসরি ফেরিতে উঠছেন। ফেরি ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল আর আগত যাত্রীদের নিয়েই ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে পাটুরিয়া থেকে আসা ইউটিলিটি ফেরি চন্দ্র মল্লিকা দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটে এসে ভীরে। এ সময় ফেরিতে কয়েকটি ব্যক্তিগত, পণ্যবাহী যানবাহন ও বেশ কয়েকজন যাত্রী দেখা যায়। ফেরিটি প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রায় ২০০ যাত্রী, কয়েকটি মোটরসাইকেল ও চারটি যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
আজ সকাল থেকেই গুরিগুরি বৃষ্টি আবার কখনো ভারি বৃষ্টি এমন অবস্থায় কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ফজলুর রহমানের সাথে অফিস বন্ধ থাকার পর ও এত ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা কেন যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসের নির্দেশ কর্মস্থানে থাকার কিন্তু বাসায় বাবা অসুস্থ থাকায় ঈদের পরেই যেতে পারিনি। তাই এখন যেতে হচ্ছে। অনেক কষ্টে বোয়ালমারী থেকে আসছি। ওপাশে কোন কিছু না পেলে হেটে যেতে হবে ঢাকা মিরপুর পর্যন্ত।
বেসরকারি বাংকে চাকরি করেন সবুজ তিনি স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে নিজস্ব মোটর সাইকেলে ঢাকা যাচ্ছেন। ফেরিতে দাড়ানোর জায়গা নেই সেখানে স্বাস্থ্য বিধি কিভাবে রক্ষা হচ্ছে। যেতে হবে কি আর করা।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, উভয় ঘাটে ছোট-বড় মিলেই মোট ১৫টি ফেরি রয়েছে। যখন যে ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ছাড়া প্রয়োজন সেভাবেই ছেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া একটি মাঝারি আকারের ভিআইপি ফেরি রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এলে তাদের পার করা হবে। তবে কঠোর বিধিনিষিধের কারণে ঘাটে আসা যানবাহন সরাসরি ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :