কোরবানির পশুর বাহারী নামে সরব ফেসবুক

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২২, ০২:১৯ পিএম
কোরবানির পশুর বাহারী নামে সরব ফেসবুক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জমে উঠেতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। এরই মধ্যে কোরবানির পশু বিক্রিতে বাহারী নামে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। পশুর মালিকরা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পশুর রাখছেন সুন্দর সুন্দর নামও। পশুর চলন বলন আর স্বভাবের ওপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছে ওইসব পশুর নাম। বস, লক্ষী, বাদশা,বাহাদুর, রাজাবাবু, কালো মানিক, টাইগার, রাজা,ভাগ্য রাজ, শান্তসহ বাহারি নাম ওইসব পশুর রয়েছে।

পাশাপাশি ওইসব নামের পশুগুলোকে তারা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইউটিউব ও ফেসবুকে আপলোড করে করে শুরু করেছেন প্রচার প্রচারণা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন ওইসব প্রচার প্রচারনা ক্রেতাদের কাছে ভালো স্থান পাচ্ছে। ক্রেতাদের সুবিধার্তে ফেসবুকে দেওয়া হচ্ছে পশুর ওজন কত, দাম, ছবি, ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বারও। বিক্রিতে ভালো সারা পাওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতা সবাই খুশি।

এ উপজেলায় অনলাইন ‘ফেসবুক’-এর মাধ্যমে পশু কেনাবেচার যেন একটা বিশাল প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে । সেখানে গরুর ছবি, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে প্রচার প্রচারণা ব্যাপক ভাবে শুরু করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০৬টি খামারসহ মোট ১৩ হাজার ৮৩২ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরমধ্যে গরু ১১১৫০টি মহিষ ৩৬৩টি ও ছাগল ভেড়া ২৩১৯টি রয়েছে।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৬১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ৩১৪৫ মহিষ ১০৭ ও ছাগল ৩৯২টি । তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় সদর উপজেলাসহ অন্যান্য স্থান থেকে আরো ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পশু আসবে বলে আশা করছেন। তবে এ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার ২৯৩টি। যে পরিমান পশু কোরবানি করা হবে তা স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ অফিস জানায়।

উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের টনকি গ্রামের কাজী: রকিব উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন শখের বসে তিনি একটি শাহী আওয়াল জাতের ষাঁড় (গরু) লালন পালন করছেন। প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট । ষাঁড়টির বয়স সাড়ে ৩ বছর। গরুটির ওজন রয়েছে ১২ মণ। বসের দাম হাকাচ্ছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে গরুটি বিক্রি করতে ইউটিউব চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ইতিমধ্যে তিনি ভালো সারা পাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত ক্রেতারা তার সাথে যোগাযোগ করে পশুর দরদাম করছেন।

ধরখারের কৃষক মো. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন তার খামারে উন্নত জাতের ১০ টি গরু রয়েছে। প্রতিটি গরুর দাম নিচে ১লাখ থেকে উপরে ১লাখ ৫০ হাজার টাকার উপরে রয়েছে। এরমধ্যে একটি গরু রয়েছে ফ্রিজিয়াম জাতের। যার ওজন রয়েছে ১০ মণ। গরুটির নাম রাখা হয়েছে কালো মানিক। গরুটির দাম হাকাচ্ছেন ৩ লাখ টাকা। গত দুই সপ্তাহ আগে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে প্রচার করা হলে তিনি ভালো সারা পেয়েছেন। ওইসবের কল্যাণে বাড়িতে থাকা তার ৪টি গরু বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন কালো মানিককে গরু দেখতে লোকজন আসছে। তিনি আশা করছেন বাড়িতেই গরুটি বিক্রি হবে।

কৃষক মো. আল-আমিন ভূইয়া বলেন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গত ৬ মাস ধরে তিনি ২৫টি দেশীয় গরু ত অতি যত্ন করে পালন করছেন।

এরমধ্যে শাহী আওয়াল জাতের ২টি গরু রয়েছে। ওই দুটি গরুর ওজন রয়েছে ৮-১০ মণ। আদর করে নাম রেখেছেন রাজা আর মানিক। গত সপ্তাহে ফেসবুকে আপলোড করায় দ্রুত প্রচার ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকের কল্যাণে বড় আকারের একটি গরু ২লাখ ৩৫ হাজার বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া দেশীয় আরো গরু ৪টি বাড়িতে বিক্রি হয়। বাকীগুলো বাজারে তুলা হবে বলে জানায়।

ক্রেতা মো: বিল্লাল হোসেন বলেন, তার দুই ছেলে প্রবাসে রয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী ও এক মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। পশুর হাটে গিয়ে পছন্দ করে গরু কেনার অবস্থা নেই। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে গরু দেখে পছন্দ করে কেনা হয়েছে। মনে হচ্ছে বাজার থেকে এই গরুটি ভালো হয়েছে।

ক্রেতা নাছিমা আক্তার বলেন, তার ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে ছেলেরা সবাই প্রবাসে রয়েছেন। একজন দেশে এসে ঈদ করার কথা রয়েছে। আসবে ঈদের একদিন আগে। বাজারে গিয়ে গরু দেখে কেনার লোকজন না থাকায় তার মেয়েরা ফেসবুকে দেখে গরু পছন্দ করেন। এরপর ছবি ভিডিও বিদেশে পাঠানো হয়। ওই গরু দেখে পছন্দ হওয়ায় দরদাম ঠিক করে ১লাখ ৭০ হাজার টাকায় কেনা হয়। এতে করে তারা সবাই খুশি। গত দুই বছর ধরে তিনি এভাবেই গরু ক্রয় করছেন।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. জুয়েল মজুমদার বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির জন্য এ উপজেলায় খামারি ও পারিবারিকভাবে পালনকারী গৃহস্থরা সন্তোষজনক ভাবে পশু বিক্রি করতে প্রস্তুতি রেখেছেন। তবে অনেক খামারি ও গৃহস্থরা নিজ আগ্রহে তাদের গরুর ছবি মোবাইল নাম্বার দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে বিক্রিতে ভালো সারা পাচ্ছেন। সকল খামারিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি খামারিদের সচেতন ও তদারকি করা হচ্ছে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করে দেশীয় খাবার খাইয়ে পশু মোটাতাজা করার জন্য কৃষক ও খামারীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!