শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে নড়িয়া নশাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সহকারি শিক্ষকরা। তদন্তে সত্যতার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তরা।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, শরীয়তপুর নড়িয়া নশাসন ইউনিয়নের নশাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ স্বপনের বিরুদ্ধে সহকারি শিক্ষকদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতায়, অসদাচরণ, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের লিখিক অভিযোগ করেছেন সহকারি শিক্ষকরা। তিনি গত ১০ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি শুরু থেকেই সহকারি শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সহকারি শিক্ষকদের বসতে না দেওয়া , নামাজের জন্য জায়গায় না দেওয়া, ছুটি চাইলে ছুটি না দেওয়া। নিয়মের বাহিরে তিনি খুলেছেন ষষ্ট থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান। এ সব ক্লাশে প্রাথমিকের শিক্ষকদের দিয়ে জোর পূর্বক ক্লাশ করতে বাধ্য করেন তিনি। ক্লাশ না করলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেননা তিনি। এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলে সহকারি শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ এমনি জুতা পেটা করতে আসেন তিনি। গত ৪ আগস্ট তার স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলে সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মোকসেদা আক্তারকে জুতা পেটা করতে আসেন প্রধান শিক্ষক। তার এই স্বেচ্ছাচারিতায় এখন অতিষ্ঠ এ বিদ্যালয়ের সকল সহকারি শিক্ষকরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানাযায়, প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ স্বপন টেন্ডার ছাড়া বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রি করেছেন, স্লিপে টাকা উত্তোলন করে কাজ না করা, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের রড, ইট, গ্রিল, টিন বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, পঞ্চশ শ্রেণীতে অতিরিক্ত ছাত্র দেখিয়ে বই বেশি এনে স্টোর রুমে রেখে সরকারি সম্পদ নষ্ট করছে। এমনি বাসা থেকে রাগ করে তিনি বিদ্যালয়ে মাঝে মাঝে'ই রাতে অবস্থান করেন। অবস্থান কালে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাশ বাদ রেখে ওদের দিয়ে রান্নার কাজ করান। এমনকি তার শিখানো সহকারি শিক্ষদের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে মিথ্যা স্বাক্ষী না দেওয়ায় ছাত্র ছাত্রীদের তিনি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ পর্যন্ত করেন।
পঞ্চম শ্রেণী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ক্লাশ বাদ দিয়ে তাদের দিয়ে রান্নার কাজ করানো। মাছ কাটিয়ে তাদের বাসার ফ্রিজে রাখান। তার কথা না শুনলে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী স্বর্নালী আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষক তাদের বাসায় গিয়ে ম্যাডাম বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে তার মা আর চাচীকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। তাকে সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে বলে।
সহকারি শিক্ষিকা মাহমুদা হাসিয়া, আয়েশা আক্তার, স্বর্ণালী, তানজিলা আক্তার, নাতাশা ইসলাম রিনথী জানান, প্রধান শিক্ষক এ স্কুলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আমাদের সাথে খারাপ আচারণ করতে শুরু করেছে। তিনি আমাদের লাইব্রেতি বসতে দেয় না। আমরা নাকি চুরি করে এই অপবাদ দেন তিনি। নামাজ লাঞ্চ করার জন্য কোন রুম ও সময় দেন না তিনি। জোরপূর্ব তিনি ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ক্লাশ করতে বাধ্য করেন, ক্লাশ না করলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেন না তিনি। এক দিনের ছুটি চাইলে সেটা তিনি দিতে চান না, ছুটি নিয়ে তালবাহনা শুরু করেন। বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন কাজের অনিয়ম করে, সেটার প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি আমাদের জুতা নিয়ে মারতে আসেন। তারা জানান বাধ্য হয়ে তারা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সিনিয়র সহকারি শিক্ষিকা মাকসুদা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়নের টাকা আসে সেটা আমরা জানি না। গত ৪ আগস্ট উন্নয়নের টাকা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে তার পায়ের জুতা নিয়ে পেটাতে আসেন। একজন শিক্ষক হিসেবে এটা তার কাছ থেকে আমার কাম্য ছিলো না। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের সহকারি শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করেন। আমি তার স্বেচ্ছাচারিতার বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ স্বপন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দায়িত্ব পালনে কঠোর। গত ৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের এক ছাত্র সড়ত দূর্ঘটনায় আহত হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে খারাপ আচারণ করে। তখন আমি শিক্ষকদের সাথে একটু রাগ হয়েছি। মোকসেদা ম্যাডামের সাথে আমার কিছু হয়নি, তিনি আমার আত্মীয়, তার সাথে আমার মধুর সম্পর্ক।
তদন্ত কর্মকর্তা নড়িয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহ মো. ইকবাল মনসুর জানান, প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবার তদন্তের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। আমরা তো ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ না।
সোনালীনিউজ/আরএইচ/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :