কক্সবাজার: শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা’র তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীরদ্বীপ, বাহারছড়া, হ্নীলা হোয়াইক্ষ্যং, উখিয়ার পালংখালী এবং জালিয়াপালং। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ২ সহস্রাধিক কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে পড়েছে।
সেন্টমার্টিনে গাছ পড়ে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসন নিশ্চিত করেননি।তবে গাছ পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১০-১৫জন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় মেনে পড়েছেন নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড়, রেড়ক্রিসেন্ট, আনসার বিডিপি, পুলিশ ও এনজিও কর্মীরা।
রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন স্থানে এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতি থেমে গেছে। তবে বাতাসের কারণে ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দ্বীপের গাছপালা পড়ে বাড়িঘর ও রাস্তার উপর এলোপাতাড়ি হয়ে পড়ে থাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে।মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে আসতে শুরু করেছে।অনেক ঘর-বাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা ইউপি সদস্য আবুলফয়েজ বলেন, বাতাসের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর ছিল। মানুষের ঘর বাড়ির টিন, ছাউনি, কাঠ, বাঁশ উড়িয়ে নিচ্ছে। বড় বড় গাছ ও নারিকেল গাছ দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। দোকানপাট ভেঙে উড়ে গেছে। পুরো সেন্টমার্টিনে বৃষ্টির পানি ও বাতাসের তীব্রতায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সব ধোঁয়াশা হয়ে আছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত মিয়ানমারের চলছে। যে কারণে বাংলাদেশের জন্য অনেকটাই ঝুঁকি কেটে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ মিয়ানমারের সিত্তে অঞ্চল দিয়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল ঝুঁকিটা চলে যাবে মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে। টেকনাফ, কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত । এর ফলে শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির সম্ভাবনা ছিল, এখন আর ততটা ঝুঁকি নেই।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার পিক আওয়ার ছিল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত । এ সময়ে দ্রুত বেগে জলোচ্ছ্বাস প্রবাহিত হয়েছে। তখন ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া ছিল।
তিনি আরও বলেন, বিকেল নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখা আমাদের অতিক্রম করে গেলেও এর প্রভাব থেকে যাবে আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। আর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরিলক্ষিত হবে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে। তবে পর্যায়ক্রমে তা কেটে যাবে।এর পর শুরু হবে ভারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত।
এ দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলছেন, তীব্র বাতাসে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ৮০ শতাংশ কাঁচাঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা পড়ে কোন কোন এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল তবে ঝড়ের গতি কমে আসলে গাছপালা সরানো হয়। বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া রামু ও উখিয়ার উপকূলে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। তবে কোথায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমদ জানান, শুষ্ক মৌসুমে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫৯৫ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ সুরক্ষিত করা হয়েছে। কারণ চলতি অর্থ বছরে মহেশখালী, কুতুবদিয়া,কক্সবাজার সদর, টেকনাফে ৩২ কোটি টাকার জরুরি ভিক্তিতে বাঁধের মেরামত করা হয়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে ৪/৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হলে ও টেকসই বেঁড়িবাধ থাকায় কোন এলাকায় পানি ঢুকতে পারেনি।
সর্বশেষ জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যানুয়ায়ী ৬৩০ টি আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে আড়াই লাখ লোক নিজ নিজ বাসস্থানের উদ্দেশ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :