মেহেরপুরে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

  • মেহেরপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৩, ১২:০৪ পিএম
মেহেরপুরে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের পীরতলা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা প্রতিযোগিতা। এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝেও ছিল উৎসবের আমেজ। লাঠি খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সের নারী পুরুষ।

মঙ্গলবার (৩০ মে) দিনব্যাপি পীরতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। খেলাটির আয়োজন করে পীরতলা ব্লাড গ্রুপ। এদিকে লাঠি খেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসে এক গ্রামীণ মেলা। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইটভাটা ব্যবসায়ি হাজী মহাম্মদ আব্দুল মতিন। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারী ডাক্তার এ.এস.এম নাজমুল হক সাগর। 

বিশেষ অতিথি হিসাবে  উপস্থিত ছিলেন মটমুড়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ চঞ্চল, বামন্দী ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি জিয়ারুল ইসলাম জিয়া, কাজীপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন মটমুড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য নিজাম আহমেদ, নারীনেত্রী নাছিমা আক্তার। লাঠিখেলার সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন রবিউল হাসান রবি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

খেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৬টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এতে নেতৃত্বে প্রদান করেন স্ব-স্ব দলের নেতা। প্রথমে বাদ্যের তালে তালে ঘুরানো হয় লাঠি। তারপর শুরু হয় লাঠিয়ালদের কেরামতি। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দেখাতে থাকেন নানা কৌশল। তাতে উৎসাহ দেন দর্শকরা। যেখানে জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। দর্শকদের বিনোদন দেওয়ায় ছিল লাঠিয়ালদের মূল লক্ষ্য খেলা শেষে প্রতিচা দলকে একটি করে খাসি ছাগল উপহার দেয়া হয়। 

আব্দুল হাদী নামের এক শিক্ষক লাঠি খেলার দৃশ্য দেখে বলেন, এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্র এই লাঠি খেলা শিল্পের প্রচলন ছিল। বর্তমানে এটি কিছু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ডিজিটালযুগ এসে এ জনপ্রিয় এ খেলাটি প্রায়ই বিলীনের পথে। এখানে এই আয়োজন করায় নতুন প্রজন্ম লাঠি খেলা দেখতে পারছে।  

লাঠি খেলা দেখতে আসা ৭২ বছরের বৃদ্ধ রফেজ উদ্দীন বলেন, একসময় লাঠি খেলা ছিল মানুষের কাছে জনপ্রিয় খেলা। গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র উৎস ছিলো এ লাঠি খেলা। ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি বৈশাখী মেলা, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন এই খেলা আর দেখা যায় না। অনেকদিন পর সেই ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা দেখতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

প্রথমবারের মতো এ খেলা দেখতে এসে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সবুজ হোসেন জানায়, এ ধরনের খেলা সে আগে কখনো দেখেনি। লাঠি নিয়ে একে ওপরের লাঠির ওপর মারছে খুব ভাল লাগছে তার।  

লাঠিয়াল আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ ও বিনোদন জোগাতে আমরা লাঠি খেলা দেখাই। তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিত হই। আমার বাবা ও দাদা এক সময় লাঠি খেলতেন, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে লাঠি খেলি।

আরেক লাঠিয়াল সোহেল রানা বলেন, এটা শুধু খেলা নয়। এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার কৌশলও শেখা যায়। অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হলে, খালি হাতেও বেঁচে আসা সম্ভব। তাছাড়াও শারীরিক কসরতে এ খেলাটি একটি অন্যতম ব্যয়াম।

এ আয়োজনের প্রধান অতিথি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডাক্তার এ,এস,এম নাজমুল হক সাগর বলেন, লাঠিখেলা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় বিভিন্ন গ্রামে লাঠিখেলা হতো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজ খেলা ছেড়ে মাদক ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হচ্ছে। তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গ্রামীণ খেলার  আয়োজক কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানায়। এ খেলায় শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের কাছে লাঠি খেলার ঐতিহ্য তুলে ধরা ও মানুষকে আনন্দ দেয়া এটা একটা ভাল উদ্যোগ। এই খেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এমন আয়োজন অব্যাহত রাখলে, যুব সমাজ ভাল কাজের দিকে ফিরে আসবে। 

সোনালীনিউজ/এআই/এসআই

Link copied!