ময়মনসিংহ: পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত চারপাশ। গাছে গাছে ভিড় করছে পাখ-পাখালি আর কীট পতঙ্গের দল। গাছগুলোতে সারি সারি কাঁঠাল দেখে থমকে দাঁড়ায় পথিক। প্রতিটি কাঁঠাল গাছে ঝুলে রয়েছে ছোট বড় শত শত কাঁঠাল। এসময় কাঠালের মিষ্টি রসে চিড়া,মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে এবার জাতীয় ফল কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও বেশি দাম পেয়ে খুশী চাষি। তাদের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাঁসি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নান্দাইলে বাণিজ্যিক ভিত্তিক কাঁঠাল বাগান নেই। বাড়ির আঙিনা,পতিত জমি ও রাস্তার দুই পাশের জমিতে কাঁঠালগাছ রয়েছে। এসব গাছে প্রতিবছর প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদন হয়। প্রতিটি গাছের গোঁড়া থেকে আগা পযর্ন্ত শোভা পাচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল। উপজেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন গাছ মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
পৌর শহরসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৮ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০ মে. টন কাঁঠাল উৎপাদন হবে বলে কৃষি অফিস ধারনা করছে।
উপজেলায় ছোট কিছু বাগানের পাশাপাশি প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দু’পাশে, পতিত জমিতে প্রচুর কাঁঠাল গাছের দেখা মেলে। যা প্রত্যেক পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।প্রতিটি গাছে ৫০ থেকে ১০০ এবং তারও অধিক কাঁঠাল ধরেছে। এ যেন কাঁঠালের রাজত্ব।
শুক্রবার (৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হাটবাজার গুলোতে পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে। এখানকার অধিকাংশ কাঁঠাল গাছগুলো বাগান ভিত্তিক না হলেও বাড়ীর আঙিনায়,রাস্তার দু’ধারে, স্কুল,কলেজের চত্তরে প্রচুর কাঁঠাল গাছের দেখা মেলে। আর এসব গাছে ঝুলে থাকা কাঁঠলের দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে।
তবে উপজেলার চরাঞ্চল কাঁঠালের জন্য প্রসিদ্ধ। ফলনও বেশী হয়। প্রতিটি বাড়ীর আঙিনায়,রাস্তার দু’ধারে দেখা যায় সারি সারি কাঁঠাল গাছ। বিশেষ করে চরকামট খালী, চরউত্তরবন্দ, চরশ্রীরামপুর, চরভেলামারী, চরলক্ষীদিয়া গ্রাম কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিভিন্ন হাট-বাজারে, চাষীদের বাড়িতে পাইকারদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা বিভিন্ন যানবাহনে করে কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়।
এখানে প্রতিটি বড় সাইজের কাঁঠাল বর্তমানে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের কাঁঠাল ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং ছোট কাঁঠাল ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছে মাঝারি সাইজের কাঁঠালের কদর রয়েছে সবচেয়ে বেশি। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কাঁঠাল মালিকরা।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাস কাঁঠাল পাকার উৎকৃষ্ট সময়। তবে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁঠাল বাজারে বেচা-কেনা হচ্ছে।
কাঁঠালের একটি বড়গুণ এর কোনো কিছু বাদ যায় না। কাঁঠালের কোষ, খোসা ও বিচি সব কিছুই প্রয়োজনীয়। বিচি উৎকৃষ্টমানের সবজি হিসাবে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁঠালের খোসা গরু-ছাগলের প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া কাঁঠালের পাতা ছাগল-ভেড়া- গরুর প্রিয় খাবার হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁঠাল উৎপাদনে কোনো খরচ না থাকায় চাষীরা লাভবান বেশি হয়।
চিকিৎসকদের মতে কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-সি ভিটামিন- বি,ভিটামিন ই-ক্যালসিয়াম ফলিক এসিড রয়েছে। টাটকা ফলে পটাশিয়াম ম্যাগনোশিয়াম এবং আয়রনের একটি ভাল উৎস। তাছাড়া পটাশিয়াম হার্টের গতি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আঁশ রয়েছে। ফলে পাকা কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বীরকামট খালী গ্রামের দুলাল মিয়া ও চরকোমরভাঙা গ্রামের কাঁঠাল বাগান মালিক মোখলেস জানান, তাদের বাগানে ৬০ থেকে ৭০ টি কাঁঠাল গাছ আছে।
দুলাল মিয়া বলেন এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছি। মোখলেস জানান তিনি ১৫ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছেন।
চরকোমরভাঙা গ্রামের মো.রুহুল আমিনের বাগানে রয়েছে ৪০ টি কাঁঠাল গাছ। তিনি বিক্রি করেছন ১২ হাজার টাকা।
বীরকামট খালী গ্রামের কাঁঠাল চাষি আব্দুস সামাদ,শরাফ উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন, লক্ষিপুর গ্রামের আব্দুল বাসিদ জানান, এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান জানান, নান্দাইলের সর্বত্রই কাঁঠাল গাছ চোখে পড়ে। নান্দাইলের মাটি বিশেষ করে চরাঞ্চলের মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ বছর উপজেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে কৃষকরা কাঁঠাল বিক্রি করে অনেক লাভবান হবেন।
সোনালীনিউজ/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :