কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে আব্দুর রহমান নামের এক চিকিৎসককে গণপিটুনি দিয়েছে রোগীর স্বজনেরা।
সোমবার (১৯ জুন) বেলা ১১ টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় অবস্থিত বেসরকারী আদ্ দ্বীন হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে । খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গণপিটুনির শিকার ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করেন। গণপিটুনির শিকার ডা. আব্দুর রহমান কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সাবেক অজ্ঞানকারী চিকিৎসক। অবসরে যাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে অপারেশনের সময় রোগীকে অজ্ঞান করার কাজ করেন।
এদিকে ঘটনার পরেই এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। চার মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখাযায়, কয়েকজন বিক্ষুব্ধ লোক একব্যক্তিকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারধর করছে। দুইজন নার্সসহ কয়েকজন মিলে ওই ব্যক্তিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
রোগীর স্বজন,পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার জিকে স্কুল এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব আলীর স্ত্রী ফিরোজা খাতুনের পিত্তথলির পাথর অপারেশনের জন্য দুইদিন আগে কুষ্টিয়ায় আদ-দ্বীন হাসপাতালে ডা. আমিরুল ইসলাম এর কাছে যান। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আজ সকালে তাকে অপারেশনের কথা জানান আমিরুল ইসলাম।
চিকিৎসাকের কথা মতো রোববার বিকেলের দিকে ফিরোজা খাতুন আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় আদ-দ্বীন হাসপাতালে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অজ্ঞানকারী চিকিৎসক ডা. আব্দুর রহমানকে সাথে নিয়ে ডা. আমিরুল ইসলাম রোগীর অপারেশন শুরু করেন। অপারেশন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অপারেশন বন্ধ রেখে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীকে পার্শ্ববর্তী মান্নান হার্ট হাসপাতালে পাঠায় আদ-দ্বীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে নেওয়া পথেই ফিরোজা খাতুনের মৃত্যু হয়।
এসময় ফিরোজার স্বজনেরা ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও আদ-দ্বীন হাসপাতালে আসেন এবং অপরেশনের অজ্ঞানকারী চিকিৎসক ডা. আব্দুর রহমানকে সামনে পেয়ে তার উপর হামলা চালায়। এসময় তাকে কিল-ঘুষি এবং এলোপাথারি লাথি মারা হয়। পরে কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এসময় মারা যাওয়া ফিরোজা খাতুনের ছেলে আসাদুল বলেন, ‘আমার আম্মুকে সুস্থ অবস্থায় অপারেশন রুমে নিয়ে যায়। তারপর আমি অপারেশনের জিনিসপত্র কিনে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন, রোগী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে অপারেশন করতে পারবো না। তার পরক্ষণেই আমার আম্মু মারা যায়।’ অপারেশন থিয়েটারে ভুল কিছু হওয়ার কারণেই আমার মা মারা গেছেন।
ঘটনার সময় অপারেশন থিয়েটারে থাকা আদ-দ্বীন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আঁখি আক্তার বলেন,‘প্রথমে আমরা রোগী নিয়ে আসলাম, রোগীর কোনো সমস্যার কথা আমাদের বলা হয়নি। সে স্বাভাবিক ছিলো, চিকিৎসকের সাথে কথাও বলেছেন । ডাক্তার আপারেশন কারার সময় রোগীর সেচুরেশন কমে যায়। পরে আস্তে আস্তে আর শ্বাস নিতে পারছিলো না। তখন অপরেশন বন্ধ রাখা হয়।
অপারেশন রুমে থাকা শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ লাবণী আক্তার বলেন, ‘রোগী আমাদের এখানে মারা যায়নি। অপারেশনের সময় রোগীর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় মান্নান হার্ট হাসপাতালে যাওয়ার পথে রোগী মারা যেতে পারে।’
জানতে চাইলে অপারেশনকারী ডা. আমিরুল ইসলাম বলেন, এই রোগীর পেছনের হিষ্ট্রি আমাদের কাছে গোপন করেছিলো। সে যে নিয়মিত হার্টের রোগী এবং গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো ওষুধ খায়নি সেটিও আমাদের জানায়নি। এছাড়াও সে বেশ বয়স্ক ছিলো। অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে অ্যানাস্থেসিয়া করা হয়েছিল। অপারেশন শুরুর সামান্য কিছু সময়ের মধ্যে তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সম্ভবত রোগীর বয়স বেশি থাকায় অথবা হার্টের সমস্যার কারনে এই দূর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর কারণে হামলা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মডেল থানা পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে এখনো কোনো বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
সোনালীনিউজ/এম
আপনার মতামত লিখুন :